পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিলাসের ফাঁস
২১

অনেকগুলি লোকের জন্য ত্যাগ করিতে বাধ্য করিয়া সমাজকে ক্ষমতাশালী করিয়া রাখে, এই উভয় পন্থাতেই ভাল মন্দ দুইই আছে। য়ুরোপীয় পন্থাই যদি একমাএ শ্রেয় বলিয়া সপ্রমাণ হইত, তাহা হইলে এ বিষয়ে কোনো কথাই ছিল না। য়ুরোপের মনীষিগণেব কথায় অবধান করিলে জানা যায় যে, এ সম্বন্ধে তাহাদের মধ্যেও মতভেদ আছে।

 যেমন করিযা হৌক্‌, আমাদের হিন্দুসমাজের সমস্ত গ্রন্থি যদি শিথিল হইয়া যায, তবে ইহা নিশ্চয় যে, বহু সহস্র বৎসরে হিন্দুজাতি যে অটল আশ্রয়ে বহু ঝড় ঝঞ্ঝা কাটাইয়া আসিয়াছে, তাহা নষ্ট হইয়া যাইবে। ইহার স্থানে নূতন আর কিছু গড়িয়া উঠিবে কি না, উঠিলেও তাহা আমাদিগকে কিরূপ নিভব দিতে পারিবে, তাহা আমরা জানি না। এমন স্থলে আমাদের যাহা আছে, নিশ্চিন্তমনে তাহার বিনাশদশা দেখিতে পাবিব না।

 মুসলমানের আমলে হিন্দুসমাজের যে কোনো ক্ষতি হয় নাই, তাহার কারণ সে আমলে ভাবতবর্ষের আর্থিক পরিবর্ত্তন হয় নাই। ভারতবর্ষের টাকা ভারতবর্ষেই থাকিত, বাহিরের দিকে তাহার টান না পড়াতে আমাদের অন্নের স্বচ্ছলতা ছিল। এই কারণ আমাদের সমাজব্যবহার সহজেই বহুব্যাপক ছিল। তখন ধনোপার্জ্জন আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তাকে এমন করিয়া আকর্ষণ করে নাই। তখন সমাজে ধনের মর্যাদা অধিক ছিল না এবং ধনই সর্ব্বোচ্চ ক্ষমতা বলিয়া গণ্য ছিল না। ধনশালী বৈশ্যগণ যে সমাজে উচ্চস্থান অধিকার করিয়াছিলেন তাহাও নহে। এই কারণে, ধনকে শ্রেষ্ঠ আসন দিলে জন সাধারণের মনে যে হীনতা আসে, আমাদের দেশে তাহা ছিল না।

 এখন টাকাসম্বন্ধে সমাজ সকলেই অত্যন্ত বেশি সচেতন হইয়া উঠিয়াছে। সেই জন্য আমাদের সমাজেও এমন একটা দীনতা আসিয়াছে যে, টাকা নাই ইহাই স্বীকার করা আমাদের পক্ষে সকলের