পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
সমাজ

চেয়ে লজ্জাকর হইয়া উঠিতেছে। ইহাতে ধনাড়ম্বরের প্রবৃত্তি বাড়িয়া উঠে, লোকে ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যয় করে, সকলেই প্রমাণ করিতে বসে যে, আমি ধনী। বণিক্‌জাতি রাজসিংহাসনে বসিয়া আমাদিগকে এই ধনদাসত্বের দারিদ্র্যে দীক্ষিত করিয়াছে।

 মুসলমানসমাজে বিলাসিতা যথেষ্ট ছিল এবং তাহা হিন্দসমাজকে যে একেবারে স্পর্শ করে নাই তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু বিলাসিতা সাধারণের মধ্যে ব্যাপ্ত হয় নাই। তখনকার দিনে বিলাসিতাকে নবাধী বলিত। অল্প লোকেরই সেই নবাবী চাল ছিল। এখনকার দিনে বিলাসিতাকে বাবুগিরি বলে; দেশে বাবুর অভাব নাই।

 এই বাবুয়ানার প্রতিযোগিতা উত্তরোত্তর বাড়িয়া উঠায় আমবা যে কতদিক্ হইতে কত দুঃখ পাইতেছি, তাহার সীমা নাই। ইহার একটা দৃষ্টান্ত দেখ। একদিকে আমাদের সমাজবিধানে কন্যাকে একটা বিশেষ বয়সে বিবাহ দিতে সকলে বাধ্য, অন্যদিকে পূর্ব্বের ন্যায় নিশ্চিন্ত চিত্তে বিবাহ করা চলে না। গৃহস্থজীবনের ভারবহন করিতে সবকগণ সহজেই শঙ্কা বোধ করে। এমন অবস্থায় কন্যার বিবাহ দিতে হইলে পাত্রকে যে পণ দিয়া ভুলাইতে হইবে, ইহাতে আশ্চর্য্য কি আছে? পণের পরিমাণও জীবনযাত্রার বর্ত্তমান আদর্শ অনুসারে যে বাড়িয়া যাইবে, ইহাতেও আশ্চর্য্য নাই। এই পণ লওয়া প্রথার বিরুদ্ধে আজকাল অনেক আলোচনা চলিতেছে; বস্তুত ইহাতে বাঙালী গৃহস্থের দুঃখ যে অত্যন্ত বাড়িয়াছে তাহাতেও সন্দেহ মাত্র নাই—কন্যার বিবাহ লইয়া উদ্বিগ্ন হইয়া নাই এমন ক্ন্যার পিতা আজ বাংলাদেশে অল্পই আছে। অথচ, এজন্য আমাদের বর্ত্তমান সাধারণ অবস্থা ছাড়া ব্যক্তিবিশেষকে দোষ দেওয়া যায় না। একদিকে ভোগের আদর্শ উচ্চ হইয়া সংসারযাত্রা বহুব্যয়সাধ্য ও অপর দিকে কন্যামাত্রকেই নির্দ্দিষ্ট বয়সের মধ্যে বিবাহ দিতে বাধ্য হইলে পাত্রের আর্থিক মূল্য না বাড়িয়া গিয়া থাকিতে