পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নকলের নাকাল
২৫

বারো মাসে তেরো পার্ব্বণে মুখরিত হইয়া থাকিত, সে দেশ নিরানন্দ নিস্তব্ধ হইয়া গেছে। দেশের অধিকাংশ অর্থ সহরে আকৃষ্ট হইয়া কোঠাবাড়ি, গাড়িঘোড়া, সাজসরঞ্জাম, আহারবিহারেই উড়িয়া যাইতেছে। অথচ যাঁহারা এইরূপ ভোগবিলাসে ও আড়ম্বরে আত্মসমর্পণ করিয়াছেন তাঁহারা প্রায় কেহই সুখে স্বচ্ছন্দে নাই;—তাঁহাদের অনেকেরই টানাটানি, অনেকেরই ঋণ, অনেকেরই পৈতৃক সম্পত্তিকে মহাজনের দায়মুক্ত কবিবার জন্য চিরজীবন নষ্ট হইতেছে—কন্যার বিবাহ দেওয়া, পুত্রকে মানুষ করিযা তোলা, পৈতৃক কীর্ত্তি রক্ষা করিয়া চলা, অনেকেরই পক্ষে বিশেষ কষ্টসাধ্য হইয়াছে। যে ধন সমস্ত দেশের বিচিত্র অভাব মোচনেব জনৃ। চারিদিকে ব্যাপ্ত হইত, সেই ধন সঙ্কীর্ণ স্থানে আবদ্ধ হইয়া যে ঐশ্বর্য্যের মায়া সৃজন করিতেছে তাহা বিশ্বাসযোগ্য নহে। সমস্ত শরীবকে প্রতারণা করিয়া কেবল মুখেই যদি রক্ত সঞ্চার হয়, তবে তাহাকে স্বাস্থ্য বলা যায় না। দেশের ধর্ম্মস্থানকে, বন্ধুস্থানকে, জন্মস্থানকে কৃশ করিয়া কেবল ভোগস্থানকে স্ফীত করিয়া তুলিলে, বাহির হইতে মনে হয় যেন দেশেব শ্রীবৃদ্ধি হইতে চলিল। সেই জন্যই এই ছদ্মবেশী সর্ব্বনাশই আমাদের পক্ষে অতিশয় ভয়াবহ। করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে।

 ১৩১২


নকলের নাকাল

 ইংবাজিতে একটি বচন আছে, সাব‍্লাইম্ হইতে হাস্যকর অধিক দূর নহে। সংস্কৃত অলঙ্কারে অদ্ভূতরস ইংরাজি সাব্ লিমিটির প্রতিশব্দ। কিন্তু অদ্ভুত দুই রকমেরই আছে—হাস্যকর অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর, অদ্ভূত।