পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
সমাজ

 দুইদিনের জন্য দার্জিলিঙে ভ্রমণ করিতে আসিয়া, এই দুই জাতের অদ্ভুত একত্র দেখা গেল। একদিকে দেবতাত্মা নগাধিরাজ আরএকদিকে বিলাতী-কাপড় পরা বাঙালী। সাব্ লাইম্ এবং হাস্যকর একেবারে গায়ে-গায়ে সংলগ্ন।

 ইংরাজী কাপড়টাই যে হাস্যকর, সে-কথা আমি বলি না— বাঙালীর ইংরাজী কাপড় পরাটাই যে হাস্যকর, সে-প্রসঙ্গও আমি তুলিতে চাহি না। কিন্তু বাঙালীর গায়ে বিসদৃশ রকমের বিলাতী কাপড় সদি করুণরসাত্মক না হয়, তবে নিঃসন্দেহই হাস্যকর। আশা করি, এসম্বন্ধে কাহারো সহিত মতের অনৈক্য হইবে না।

 হয়ত কাপড় এক রকমের টুপি এক রকমের, হয় ত কলার আছে টাই নাই, হয় ত যে রংটা ইংরাজের চক্ষে বিভীষিকা সেই রঙের কুর্ত্তি, হয়ত যে অঙ্গাবরণকে ঘরের বাহিরে ইংরাজ বিবসন বলিয়া গণ্য করে, সেই অসঙ্গত অঙ্গচ্ছদ। এমনতর অজ্ঞানকৃত সং-সজ্জা কেন?

 ষদি সম্মুখে কাছা ও পশ্চাতে কোঁঁচা দিয়া কোনো ইংরাজ বাঙালী টোলায় ঘুরিয়া বেড়ায়, তবে সে ব্যক্তি সম্মানলাভের আশা করিতে পারে না। আমাদের যে বাঙালী ভ্রাতারা অদ্ভুত বিলাতী সাজ পরিয়া গিরিরাজের রাজসভায় ভাঁড় সাজিয়া ফিরেন, তাহারা ঘরের কড়ি খরচ করিয়া ইংরাজ দর্শকের কৌতুক বিধান করিয়া থাকেন।

 বেচারা কি আর করিবে? ইংরাজ-দপ্তর সে জানিবে কি করিয়া? যিনি বিলাতফেরৎ-বাঙালীর দস্তুর জানেন, তাঁহার স্বদেশীয়ের এই বেশবিভ্রমে তিনিই সব চেয়ে লজ্জাবোধ করেন। তিনিই সব চেয়ে তীব্রস্বরে বলিয়া থাকেন, —যদি না জানে তবে পরে কেন? আমাদের শুদ্ধ ইংরাজের কাছে অপদস্ত করে!

 না পরিবে কেন? তুমি যদি পর, এবং পরিয়া দেশী পরিচ্ছদধারীর চেয়ে নিজেকে বড় মনে কর, তবে সে গর্ব্ব হইতে সেই বা