পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
সমাজ

করিতে পারি না? কারণ, তাঁহারা সক্ষম, আর সকলে অক্ষম। এমন কি, অবস্থাবিশেষে তাঁহাদের পুত্রপৌত্রেরাও অক্ষম হইয়া পড়িবে। তাহারা যখন ফিরিঙ্গিলীলার অধস্তন রসাতলের গলিতে গলিতে সমাজচ্যুত আবর্জ্জনার মত পড়িয়া থাকিবে, তখন কি ব্যাঙ্কিনবিলাসীর প্রেতাত্মা শান্তিলাভ করিবে?

 দরিদ্র কোনোমতেই পরের নকল ভদ্ররকমে করিতে পারে না। নকল করিবার কাঠগড় বেশি। বাহির হইতে তাহার আয়োজন করিতে হয়। যাহাকে নকল করিতে হইবে, সর্ব্বদা তাহার সংসর্গে থাকিতে হয়—দরিদ্রের পক্ষে সেইটেই সর্ব্বাপেক্ষা কঠিন। সুতরাং সে অবস্থায় নকল করিতে হইলে, আদর্শভ্রষ্ট হইয়া কিম্ভূতকিমাকার একটা ব্যাপার হইয়া পড়ে। বাঙ্গালীর পক্ষে খাটো ধূতি পরা লজ্জাকর নহে, কিন্তু খাটো প্যাণ্ট‍্লুন পরা লজ্জাজনক। কারণ, খাটো প্যাণ্ট‍্ লুনে কেবল অসামর্থ্য বুঝায় না, তাহাতে পর সাজিবার যে চেষ্টা, যে স্পর্দ্ধা প্রকাশ পায়, তাহা দারিদ্র্যের সহিত কিছুতেই সুসঙ্গত নহে।

 আচার-ব্যবহার সাজ-সজ্জা উদ্ভিদের মত—তাহাকে উপ‍্ড়াইয়া আনিলে শুকাইয়া পচিয়া নষ্ট হইয়া যায়। বিলাতী বেশভূষা-আদবকায়দার মাটি এখানে কোথায়? সে কোথা হইতে তাহার অভ্যস্ত রস আকর্ষণ করিয়া সজীব থাকিবে? ব্যক্তিবিশেষ খরচপত্র করিয়া কৃত্রিম উপায়ে মাটি আমদানী করিতে পারেন এবং দিনরাত সযত্ন-সচেতন থাকিয়া তাহাকে কোনোমতে খাড়া রাখিতে পারেন। কিন্তু সে কেবল দুইচারিজন সৌগীনের দ্বারাই সাধ্য।

 যাহাকে পালন করিতে—সজীব রাখিতে পারিবে না, তাহাকে ঘরের মধ্যে আনিয়া পচাইয়া হাওয়া খারাপ করিবার দরকার? ইহাতে পরেরটাও নষ্ট হয়, নিজেরটাও মাটি হইয়া যায়। সমস্ত মাটি করিবার সেই আয়োজন বাংলাদেশেই দেখিতেছি।