পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
সমাজ

লালন পালন পোষণ করবাব সুদীর্ঘ অবসর এবং সুযোগ পাচ্চেন একদিকে যেমন বন্ধনহীন পরহিতৈষা আর একদিকেও তেমনি বাধা বিহীন স্বার্থপরতা। আমাদের যেমন প্রতিবৎসর পরিবার বাড়্‌চে, ওদের তেমনি প্রতিবৎসর আরাম বাড়্‌চে। আমরা বলি যাবৎ দারপরিগ্রহ না হয় তাবৎ পুরুষ অর্দ্ধেক, ইংবাজ বলে যতদিন একটি ক্লাব না জোটে ততদিন পুরুষ অর্দ্ধাঙ্গ, আমবা বলি সন্তানে গৃহ পরিবৃত না হলে গৃহ শ্মশানসমান, ইংরাজ বলেন আসবাব্ অভাবে গৃহ শ্মশানতুল্য।

 সমাজে একবার যদি এই বাহ্যসম্পদকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া হয় তবে সে এমনি প্রভু হয়ে বসে যে, তার হাত আর সহজে এড়াবার জো থাকে না। তবে ক্রমে সে গুণের প্রতি অবজ্ঞা এবং মহত্ত্বের প্রতি কপাকটাক্ষপাত করতে আরম্ভ করে। সম্প্রতি এদেশেও তার অনেকগুলি দৃষ্টান্ত দেখা যায়। ডাক্তারিতে যদি কেহ পসার করতে ইচ্ছা করেন, তবে তাঁর সর্ব্বাগ্রেই জুড়ি গাড়ি এবং বড় বাড়ীর আবশ্যক, এই জন্যে অনেক সময়ে রোগীকে মারতে আরম্ভ করবার পূর্ব্বে নবীন ডাক্তার নিজে মরতে আরম্ভ করেন। কিন্তু আমাদের কবিবাজ মহাশয় যদি চটি এবং চাদর পরে’ পাল্কী অবলম্বনপূর্ব্বক যাতায়াত করেন তাতে তাঁর পসারের ব্যাঘাত করে না। কিন্তু একবার যদি গাড়ি ঘোড়া ঘড়ি ঘড়ির চেনকে আমল দেওয়া হয় তবে সমস্ত চরক সুশ্রুত ধন্বন্তরীর সাধ্য নেই যে, আর তার হাত থেকে পবিত্রাণ করে। ইন্দ্রিয়সূত্রে জড়ের সঙ্গে মানুষের একটা ঘনিষ্ঠ কুটুম্বিতা আছে, সেই সুযোগে সে সর্ব্বদাই আমাদের কর্ত্তা হয়ে উঠে। এই জন্যে প্রতিমা প্রথমে ছল করে’ মন্দিরে প্রবেশ করে তার পরে দেবতাকে অতিষ্ঠ করে’ তোলে। গুণের বাহ্য নিদর্শনস্বরূপ হয়ে ঐশ্বর্য্য দেখা দেয় অবশেষে বাহ্যাড়ম্বরেব অনুবর্ত্তী হয়ে না এলে গুণের আর সম্মান থাকে না।