পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচ্য ও প্রতীচ্য
৫৭

প্রতি দৃষ্টি করলে কাউকেই দূর করে দেওয়া যায় না। এমন কি, সকল ভালর মধ্যেই এমন একটি পারিবারিক বন্ধন আছে যে একজনকে দূর করলেই আর একজন দুর্ব্বল হয় এবং অঙ্গহীন মনুষ্যত্ব ক্রমশ আপনার গতি বন্ধ করে’ সংসারপথপার্শ্বে একস্থানে স্থিতি অবলম্বন করতে বাধ্য হয় এবং এই নিরুপায় স্থিতিকেই উন্নতির চূড়ান্ত পরিণাম বলে’ আপনাকে ভোলাতে চেষ্টা করে।

 গাছ যদি সহসা বুদ্ধিমান কিংবা অত্যন্ত সহৃদয় হয়ে ওঠে তাহ’লে সে মনে মনে এমন তর্ক করতে পারে যে, মাটিই আমার জন্মস্থান অতএব কেবল মাটির রস আকর্ষণ করে’ই আমি বাঁচ্‌ব। আকাশের রৌদ্রবৃষ্টি আমাকে ভুলিয়ে আমার মাতৃভূমি থেকে আমাকে ক্রমশই আকাশের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে, অতএব আমরা নব্যতরুসম্পদায়ের একটা সভা করে’ এই সতত চঞ্চল পবিবর্ত্তনশীল রৌদ্রবৃষ্টি বায়ুর সংস্পর্শ বহুপ্রযত্নে পবিহারপূর্ব্বক আমাদের ধ্রুব অটল সনাতন ভূমির একান্ত আশ্রয় গ্রহণ করব।

 কিম্বা সে এমন তর্কও কর্‌তে পারে যে ভূমিটা অত্যন্ত স্থূল, হেয় এবং নিম্নবর্ত্তী, অতএব তার সঙ্গে কোনো আত্মীয়তা না রেখে আমি চাতক পক্ষীর মত কেবল মেঘের মুখ চেয়ে থাক্‌ব— দুয়েতেই প্রকাশ পায় বৃক্ষের পক্ষে যতটা আবশ্যক তার চেয়ে তার অনেক অধিক বুদ্ধির সঞ্চার হয়েছে।

 তেমনি বর্ত্তমান কালে যাঁরা বলেন আমরা প্রাচীন শাস্ত্রের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে বাহিরের শিক্ষা হ’তে আপনাকে রক্ষা করবার জন্যে আপাদমস্তক আচ্ছন্ন করে বসে থাক্‌ব, কিম্বা যাঁরা বলেন হঠাৎ-শিক্ষার বলে আমরা আতসবাজির মত এক মুহূর্ত্তে ভারতভূতল পরিত্যাগ করে’ সুদূর উন্নতির জ্যোতিষ্ক-লোকে গিয়ে হাজির হব তাঁরা উভয়েই অনাবশ্যক কল্পনা নিয়ে অতিরিক্ত বুদ্ধি-কৌশল প্রয়োগ কর্‌চেন।