পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
সমাজ

মনে করি সে হয় ত মহৎ নয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্য্যন্ত আমার কল্পনায় সে মহৎ ততক্ষণ তাহাকে ভক্তি করিলে ক্ষতির কারণ অল্পই আছে।

 ক্ষতির কারণ কিছু নাই তাহা নয়। পূর্ব্বেই বলিয়াছি যাহাকে মহৎ বলিয়া ভক্তি করি জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতসারে তাহার অনুকরণে প্রবৃত্ত হই। যে লোক প্রকৃত মহৎ নহে কেবল আমাদের কল্পনায় ও বিশ্বাসে মহৎ, অন্ধভাবে তাহার আচরণের অনুকরণ আমাদের পক্ষে উন্নতিকর নহে।

 কিন্তু আমাদের দেশে আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, আমরা ভুল বুঝিয়াও ভক্তি করি। আমরা যাহাকে হীন বলিয়া জানি তাহার পদধূলি অকৃত্রিম ভক্তিভরে মস্তকে ধারণ করিতে ব্যগ্র হই।

 আমাদের দেশে মোহান্তের মহৎ, পুরোহিতের পবিত্র এবং দেবচরিত্রের উন্নত হওয়ার প্রয়োজন হয় না, কারণ, আমরা ভক্তি লইয়া প্রস্তুত রহিয়াছি। যে মোহান্ত জেলে যাইবার যোগ্য তাহার চরণামৃত পান করিয়া আমরা আপনাকে অপমানিত জ্ঞান করি না, যে পুরোহিতের চরিত্র বিশুদ্ধ নহে এবং যে লোক পূজানুষ্ঠানের মন্ত্রগুলির অর্থ পর্য্যন্তও জানে না তাহাকে ইষ্ট গুরুদেব বলিয়া স্বীকার করিতে আমাদের মুহূর্তের জন্যও কুণ্ঠা বোধ হয় না,—এবং আমাদেরই দেশে দেখা যায়, যে-সকল দেবতার পুরাণ-বর্ণিত আচরণ লক্ষ্য করিয়া আলাপে ও প্রচলিত কাব্যে ও গানে অনেক স্থলে নিন্দা ও পরিহাস করি সেই দেবতাকেই আমরা পূর্ণ ভক্তিতে পূজা করিয়া থাকি।

 সুতরাং এস্থলে সহজেই মনে প্রশ্ন উঠে, কেন পূজা করি? তাহার এক উত্তর এই যে, অভ্যাসবশত অর্থাৎ মনের জড়ত্ব বশত, দ্বিতীয় উত্তর এই যে, ভক্তিজনক গুণের জন্য নহে পরন্তু শক্তি কল্পনা করিয়া এবং সেই শক্তি হইতে ফল কামনা করিয়া।

 আমাদের উদ্ধৃত শ্লোকের প্রথমেই আছে “ইষ্টি আর পুরোহিত