পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অযোগ্য ভক্তি
৬৭

যাহা হ’তে সর্ব্বস্থিত।” ইহাতেই বুঝা যাইতেছে গুরু ও পুরোহিতেব মধ্যে আমবা একটা গূঢ় শক্তি কল্পনা করিয়া থাকি, তাঁহাদের শিক্ষা, চরিত্র ও আচরণ যেমনই হৌক্‌ তাঁহারা আমাদের সাংসারিক মঙ্গলের প্রধান কারণ এবং তাঁহাদেব প্রতি ভক্তিতে লাভ ও অভক্তিতে লোকসান আছে এই বিশ্বাস আমাদের মাথাকে তাঁহাদের পায়ের কাছে নত করিয়া রাখিয়াছে। কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে এ বিশ্বাস এতদূর পর্য্যন্ত গিয়াছে যে তাঁহারা গৃহধর্ম্মনীতির সুস্পষ্ট ব্যভিচাব দ্বারাও গুরুভক্তিকে অন্যায় প্রশ্রয় দিয়া থাকেন।

 দেবতা সম্বন্ধেও সে কথা খাটে। দেবচবিত্র আমাদের আদর্শ চরিত্র হইবে এমন আবশ্যক নাই। দেবভক্তিতে ফল আছে, কারণ দেবতা শক্তিমান।

 ব্রাহ্মণ সম্বন্ধেও তাহাই। ব্রাহ্মণ দুশ্চরিত্র নরাধম হইলেও ব্রাহ্মণ বলিয়াই পূজ্য। ব্রাহ্মণের কতকগুলি নিগূঢ় শক্তি আছে। তাঁহাদের প্রসাদে ও বিবাগে আমাদের ভালমন্দ ঘটিয়া থাকে। এরূপ ভক্তিতে ভক্ত ও ভক্তিপাত্রের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্বন্ধ থাকে না, দেনা-পাওনার সম্বন্ধই দাঁড়াইয়া যায়। সেই সম্বন্ধে ভক্তিপাত্রকেও উচ্চ হইতে হয় না এবং ভক্তও নীচতা লাভ করে।

 কিন্তু আমাদের দেশের দেবভক্তি সম্বন্ধে আধুনিক শিক্ষিত অনেকে অত্যন্ত সূক্ষ্ম তর্ক করেন। তাঁহারা বলেন ঈশ্বর যখন সর্ব্বজ্ঞ সর্ব্বব্যাপী তখন ঈশ্বর বলিয়া আমরা যাঁহাকেই পূজা করি ঈশ্বরই সে-পূজা গ্রহণ করেন। অতএব এরূপ ভক্তি নিষ্ফল নহে।

 পূজা যেন খাজনা দেওয়ার মত, স্বয়ং রাজার হস্তেই দিই আর তাঁহার তহশিলদারের হস্তেই দিই একই রাজভাণ্ডারে গিয়া জমা হয়।

 দেবতার সহিত দেনা-পাওনার সম্বন্ধ আমাদের মনে এমনই বদ্ধমূল হইয়া গেছে যে, পূজার দ্বারা ঈশ্বরের যেন একটা বিশেষ উপকার