পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
সমাজ

 আসল কথা কি জান? সেকালে আমরা নাম লইয়া এত ভাবিতাম না। সেটা হয়ত আমাদের অসভ্যতার পরিচয়। আমরা মনে করিতাম, নামে মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাঁকাইয়া তোলে। মন্দ কাজ করিলেই মানুষের বদনাম হয়, ভাল কাজ করিলেই মানুষের সুনাম হয়। বাবা কেবল একটা নামই দিতে পারে কিন্তু ভাল নাম কিম্বা মন্দ নাম সে ছেলে নিজেই দেয়। ভাবিয়া দেখ আমাদের প্রাচীনকালের বড় বড় নাম শুনিতে নিতান্ত মধুর নয়— যুধিষ্ঠির, রামচন্দ্র, ভীষ্ম, দ্রোণ, ভরদ্বাজ, শাণ্ডিল্য, জন্মেজয়, বৈশম্পায়ন ইত্যাদি। কিন্তু ঐ সকল নাম অক্ষয়-বটের মত আজ পর্য্যন্ত ভারতবর্ষের হৃদয়ে সহস্র শিকড়ে বিরাজ করিতেছে। আমাদের আজকালকার উপন্যাসের ললিত, নলিনমোহন, প্রভৃতি কত মিঠি মিঠি নাম বাহির হইতেছে কিন্তু এখনকার পাঠক-পিপীলিকারা এই মিষ্ট নামগুলিকে দুই দণ্ডেই নিঃশেষ করিয়া ফেলে, সকালের নাম বিকালে টিঁকে না। যাহাই হউক, আমরা নামের প্রতি মনোযোগ করিতাম না। তুমি বলিতেছ, সেটা আমাদের ভ্রম। সে-জন্য বেশী ভাবিও না ভাই; আমরা শীঘ্রই মরিব এমন সম্ভাবনা আছে; আমাদের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গসমাজের সমস্ত ভ্রম সমূলে সংশোধিত হইয়া যাইবে।

 পূর্ব্বেই বলিয়াছি এখনকার আদবকায়দা আমার বড় জানা নাই, কিন্তু ইহাই দেখিতেছি আদবকায়দা এখনকার দিনে নাই, আমাদের কালেই ছিল। এখন বাপকে প্রণাম করিতে লজ্জাবোধ হয়, বন্ধুবান্ধবকে কোলাকোলি করিতে সঙ্কোচবোধ হয়, গুরুজনের সম্মুখে তাকিয়া ঠেসান দিয়া তাস পিটিতে লজ্জাবোধ হয় না, রেলগাড়িতে যে বেঞ্চে পাঁচজনে বসিয়া আছে তাহার উপরে দুইখানা পা তুলিয়া দিতে সঙ্কোচ জন্মে না। তবে হয় ত আজকাল অত্যন্ত সহৃদয়তার প্রাদুর্ভাব হইয়াছে, আদবকায়দার তেমন আবশ্যক নাই। সহৃদয়তা! তাই