পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
সমাজ

অবসিত। আমাদের মহত্ত্ব ব্যাপক দেশে ব্যাপক কালে স্থান পায় না। অত কথায় কাজ কি, উদার মহত্ত্বকে আমরা কোনো মতে বিশ্বাস করিতেই পারি না। যদি দেখি কোনো এক ব্যক্তি টাকা-কড়ির দিকে খুব বেশী মনোযোগ না দিয়া খানিকটা করিয়া সময় দেশের কাজে ব্যয় করে, তবে তাহাকে বলি “হুজুকে”। আমাদের স্ফীত ক্ষুদ্রত্বের নিকট বড় কাজ একটা হুজুক বই আর কিছুই নয়। আমরা টাকা-কড়ি ক্ষুধাতৃষ্ণা এ-সকলের একটা অর্থ বুঝিতে পারি, ক্ষুদ্র প্রবৃত্তিব বশে এবং সঙ্কীর্ণ কর্ত্তব্যজ্ঞানে কাজ করাকেই বুদ্ধিমান প্রকৃতিস্থ ব্যক্তির লক্ষণ বলিয়া জানি—কিন্তু মহৎ কার্য্যের উৎসাহে আত্মসমর্পণ করার কোনো অর্থই আমরা খুঁজিয়া পাই না। আমরা বলি, ও-ব্যক্তি দল বাঁধিবার জন্য বা নাম করিবার জন্য বা কোনো একটা গোপনীয় উপায়ে অর্থ উপার্জ্জন করিবার জন্য এই কাজে প্রবৃত্ত হইয়াছে—স্পষ্ট করিয়া কিছু যদি না বলিতে পারি ত বলি, ওর একটা মতলব আছে। মতলব ত আছেই! কিন্তু মতলব মানে কি কেবলই নিজের উদর বা অহঙ্কার তৃপ্তি, ইহা ব্যতীত আর দ্বিতীয় কোনো উচ্চতর মতলব আমরা কি কল্পনাও করিতে পারি না! এম্‌নি আমাদের জাতির হৃদয়গত বদ্ধমূল ক্ষুদ্রতা! কিন্তু এদিকে দেখ রামহরি বা কালাচাঁদের উপকারের জন্য কেহ প্রাণপণ করিতেছে এরূপ নিঃস্বার্থভাব দেখিলে আমরা তাহার প্রশংসা করিয়াই থাকি, অথচ, মানবজাতির উপকারের জন্য আপিষ কামাই করা—এরূপ অবিশ্বাসজনক হাস্যজনক প্রস্তাব আপিষ-কোটরবাসী ক্ষুদ্র বাঙালী-পেচকের নিকটে নিতান্ত রহস্য বলিয়া বোধ হয়। সামাজিক প্রবন্ধ দেখিলে বাঙালী পাঠকেরা ক্রমাগত ঘ্রাণ করিয়া করিয়া সন্ধান করিতে থাকে ইহা কোন ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে লিখিত! সমাজের কোনো কুরুচি বা কদাচারের বিরুদ্ধে কেহ যে রাগ করিতে পারে ইহা তেমন সম্ভব বোধ হয় না—এই উপলক্ষ করিয়া কোনো শত্রুর প্রতি