পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
৯১

আক্রমণ করা ইহাই একমাত্র যুক্তিসঙ্গত, মনুষ্য-স্বভাব অর্থাৎ বাঙালীস্বভাবসঙ্গত বলিয়া সকলের বোধ হয়। এই জন্য অনেক বাংলা কাগজে ব্যক্তিবিশেষের কথা খুঁটিয়া খুঁটিয়া উঞ্ছবৃত্তি করা হয়—যা’কে তা’কে ধরিয়া তাহার উকুন বাছিয়া বা উকুন বাছিবার ভাণ করিয়া বাঙালী দর্শক সাধারণের পরম আমোদ উৎপাদন করা হয়।

 এই সকল দেখিয়া শুনিয়াই ত বলিয়াছিলাম আমরা ব্যক্তির জন্য আত্মবিসর্জ্জন করিতেও পারি। কিন্তু মহৎ ভাবের জন্য সিকি পয়সাও দিতে পারি না। আমরা কেবল ঘরে বসিয়া বড় কথা লইয়া হাসি তামাসা করিতে পারি, বড় লোককে লইয়া বিদ্রূপ করিতে পারি, তার পরে ফুড়ফুড় করিয়া খানিকটা তামাক টানিয়া তাস খেলিতে বসি। আমাদের কি হবে তাই ভাবি? অথচ ঘরে বসিয়া আমাদের অহঙ্কার অভিমান খুব মোটা হইতেছে। আমরা ঠিক দিয়া রাখিয়াছি আমরা সমুদয় সভ্য জাতির সমকক্ষ। আমরা না পড়িয়া পণ্ডিত, আমরা না লড়িয়া বীর, আমরা ধাঁ করিয়া সভ্য, আমরা ফাঁকি দিয়া পেট্রিয়ট—আমাদের রসনার অদ্ভুত রাসায়নিক প্রভাবে জগতে যে তুমুল বিপ্লব উপস্থিত হইবে আমরা তাহারই জন্যে প্রতীক্ষা করিয়া আছি; সমস্ত জগৎও সেই দিকে সবিস্ময়ে নিরীক্ষণ করিয়া আছে। দাদামশায়, আর হরিশ্চন্দ্র রামচন্দ্র দধীচির কথা পাড়িয়া ফল কি বল শুনি? উহাতে আমাদের ফুটন্ত বাগ্মিতার মুখে ফোড়ন দেওয়া হয় মাত্র—আর কি হয়?

 আমরা কেবল আপনাকে এ’কে ও’কে তা’কে এবং এটা ওটা সেটা লইয়া মহা ধূমধাম ছটফট্ বা খুঁৎ খুঁৎ করিয়া বেড়াইতেছি— প্রকৃত বীরত্ব, উদার মনুষ্যত্ব, মহত্ত্বের প্রতি আকাঙ্ক্ষা, জীবনের গুরুতর কর্ত্তব্য সাধনের জন্য হৃদয়ের অনিবার্য্য আবেগ, ক্ষুদ্র বৈষয়িকতার অপেক্ষা সহস্রগুণ শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ঔৎকর্ষ—এ-সকল আমাদের দেশে কেবল কথারকথা হইয়া রহিল— দ্বার নিতান্ত ক্ষুদ্র বলিয়া জাতির হৃদয়ের