পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
৯৩

কিন্তু প্রাণ জাগাইয়া রাখিতে হইলেই তাহার উপযোগী বাতাস চাই, তাহার উপযোগী খাদ্য চাই। আমাদের হৃদয়ের তপ্ত রক্ত সেই স্মৃতির শিরার মধ্যে প্রবাহিত হওয়া চাই। মনুষ্যত্বের মধ্যেই ভীষ্ম দ্রোণ বাঁচিয়া আছেন। আমরা ত নকল মানুষ! অনেকটা মানুষের মত! ঠিক মানুষের মত খাওয়া দাওয়া করি, চলিয়া ফিরিয়া বেড়াই, হাই তুলি ও ঘুমোই—দেখিলে কে বলিবে যে মানুষ নই! কিন্তু ভিতরে মনুষ্যত্ব নাই। যে-জাতির মজ্জার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে, সে-জাতির কেহ মহত্ত্বকে অবিশ্বাস করিতে পারে না, মহৎ আশাকে কেহ গাঁজাখুরী মনে করিতে পারে না, মহৎ অনুষ্ঠানকে কেহ হুজুক বলিতে পারে না, সেখানে সঙ্কল্প কার্য্য হইয়া উঠে, কার্য্য সিদ্ধিতে পরিণত হয়। সেখানে জীবনের সমস্ত লক্ষণই প্রকাশ পায়। সে-জাতিতে সৌন্দর্য্য ফুলের মত ফুটিয়া উঠে, বীরত্ব ফলের মত পক্কতা প্রাপ্ত হয়। আমার বিশ্বাস আমরা যতই মহত্ত্ব উপার্জ্জন করিতে থাকিব, আমাদের হৃদয়ের বল যতই বাড়িয়া উঠিবে— আমাদের দেশের বীরগণ ততই পুনর্জ্জীবন লাভ করিবেন। পিতামহ ভীষ্ম আমাদের মধ্যে বাঁচিয়া উঠিবেন। আমাদের সেই নূতন জীবনের মধ্যে আমাদের দেশের প্রাচীন জীবন জীবন্ত হইয়া উঠিবে। নতুবা মৃত্যুর মধ্যে জীবনের উদয় হইবে কি করিয়া? বিদ্যুৎ প্রয়োগে মৃতদেহ জীবিতের মত কেবল অঙ্গভঙ্গী ও মুখভঙ্গী করে মাত্র। আমাদের দেশে সেই বিচিত্র ভঙ্গিমার প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। কিন্তু হায় হায়, কে আমাদিগকে এমন করিয়া নাচাইতেছে! কেন আমরা ভুলিয়া যাইতেছি যে আমরা নিতান্ত অসহায়! আমাদের এত সব উন্নতির মূল কোথায়! এসব উন্নতি রাখিব কিসের উপরে। রক্ষা করিব কি উপায়ে! একটু নাড়া খাইলেই দিন-দুয়ের সুখস্বপ্নের মত সমস্তই যে কোথায় বিলীন হইয়া যাইবে! অন্ধকারের মধ্যে বঙ্গদেশের উপরে ছায়াবাজীর উজ্জ্বল ছায়া পড়িয়াছে, তাহাকেই স্থায়ী