পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সমালোচনা

প্রতি ইঁহাদের ব্যবহার স্বতন্ত্র। মায়ের কাছ হইতে ইঁহারা যাহা কিছু পাইয়াছেন, অতীতের কাছ হইতে তাহা অপেক্ষা অনেক বেশী পাইয়াছেন, তবে কেন অতীতের প্রতি ইঁহাদের এমনতব অকৃতজ্ঞ অবহেলা! অতীতের অনাবশ্যক যাহা কিছু, তাহা সমস্তই ইহারা কেন কুসংস্কার বলিয়া একেবারে ঝাঁটাইয়া ফেলিতে চান? তাঁহারা ইহা বুঝেন না, শুষ্ক জ্ঞানের চক্ষে সমস্ত আবশ্যক অনাবশ্যক ধরা পড়ে না। আমাদের আচার ব্যবহারে কতকগুলি চিরন্তন প্রথা প্রচলিত আছে, সে গুলি ভালও নয়, মন্দও নয়, কেবল দোষের মধ্যে তাহারা অনাবশ্যক, তাহাদের দেখিয়া কঠোর জ্ঞানবান লোকের মুখে হাসি আসে এই ছুতায় তুমি তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিলে। মনে করিলে, তুমি কতকগুলি অর্থহীন অনাবশ্যক হাস্যরসোদ্দীপক অনুষ্ঠান পরিত্যাগ করিলে মাত্র, কিন্তু আসলে কি করিলে! সেই অর্থহীন প্রথার মন্দির-মধ্যে অধিষ্ঠিত সুমহৎ অতীতদেবকে ভাঙ্গিয়া ফেলিলে, একটি জীবন্ত ইতিহাসকে বধ করিলে, তোমার পূর্ব্বপুরুষদিগের একটি স্মরণচিহ্ন ধ্বংস করিয়া ফেলিলে। তোমার কাছে তোমার মায়ের যদি একটি স্মরণচিহ্ন থাকে, বাজারে তাহার দাম নাই বলিয়া তোমার কাছেও যদি তাহার দাম না থাকে তবে তুমি মহাপাতকী। তেমনি অনেকগুলি অর্থহীন প্রথা পূর্ব্বপুরুষদিগের ইতিহাস বলিয়াই মূল্যবান। তুমি যদি তাহার মূল্য না দেখিতে পাও, তাহা অকাতরে ফেলিয়া দাও, তবে তোমার শরীরে দয়াধর্ম্ম কোন্‌খানে থাকে তাহাই আমি ভাবি। যাহাদের বুট-তরি আশ্রয় করিয়া তোমরা ভবসমুদ্র