পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
সমালোচনা।

কমনীয়া কিশোর কুসুম অতি সুকোমল
কেবল রসনিরমাণ॥
অমল শশধর জিনি মুখ সুন্দর
সুরঙ্গ অধর পরকাশ,
ঈষৎ মধুর হাস সরসহি সম্ভাষ
রায়বসন্ত-পহু রঙ্গিণী বিলাস॥

 ইহাতে কেবল ফুল, কেবল মধুর হাসি ও সরল সম্ভাষণ আছে, কেবল সৌন্দর্য্য আছে। এক শ্যামের সৌন্দর্য্য দেখিয়া জগতের সৌন্দর্য্যের রাজ্য উদঘাটিত হইতে চাহে। যমুনার নিরমল ঢলঢল ভাব ফুটিয়া ওঠে, একে একে একেকটি ফুল শ্যামের মুখের কাছে আসিয়া দাঁড়ায় – কারণ, সৌন্দর্য্য সৌন্দর্য্যকে কাছে ডাকিয়া আনে– ফুলের যাহা প্রাণের ভাব সে তাহা উন্মুক্ত করিয়া দেয়। বসন্তরায় এ সৌন্দর্য্য মুগ্ধনেত্রে দেখিয়াছেন, লালসাতৃষিত নেত্রে দেখেন নাই! এমন, একটি কেন, রায়বসন্ত হইতে তাঁহার সমুদয় রূপবর্ণনা উদ্ধৃত করিয়া দেওয়া যায়– দেখানো যায় যে যাহা তাঁহার সুন্দর লাগিয়াছে, তাহাই তিনি বর্ণনা করিয়াছেন। রূপবর্ণনা ত্যাগ করা যাক্‌, সম্ভোগবর্ণনা দেখা যাক্‌। বিদ্যাপতি কেবল সম্ভোগমাত্রই বর্ণনা করিয়াছেন; বসন্তরায় সম্ভোগের মাধুর্য্যটুকু, সম্ভোগের কবিত্বটুকু মাত্র বর্ণনা করিয়াছেন। বিদ্যাপতি-রচিত “বিগলিতচিকুর মিলিত মুখমণ্ডল” ইত্যাদি পদটির সহিত পাঠকেরা বসন্তরায়-রচিত নিম্নলিখিত পদটির তুলনা করুন।