পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বসন্তরায়।
১১৭

তোমা না দেখিয়া আমি কেমনে রহিব?
তোমার মিলন মোর পুণ্যপুঞ্জরাশি,
মরমে লাগিছে মধুর মৃদু হাসি!
আনন্দমন্দির তুমি, জ্ঞান শকতি,
বাঞ্ছাকল্পলতা মোর কামনা মূরতি।
সঙ্গের সঙ্গিনী তুমি সুখময় ঠাম।
পাসরিব কেমনে জীবনে রাধা নাম।
গলে বনমালা তুমি, মোর কলেবর।
রায় বসন্ত কহে প্রাণের গুরুতর।”

 এমন প্রশান্ত উদার গম্ভীর প্রেম বিদ্যাপতির কোনো পদে প্রকাশ পাইয়াছে কিনা সন্দেহ। ইহার কয়েকটি সম্বোধন চমৎকার। রাধাকে যে কৃষ্ণ বলিতেছেন– তুমি আমার কামনার মূর্তি, আমার মূর্তিমতী কামনা– অর্থাৎ তুমি আমার মনের একটি বাসনা মাত্র, রাধারূপে প্রকাশ পাইতেছ, ইহা কী সুন্দর! তুমি আমার গলে বনমালা, তোমাকে পরিলে আমার শরীরতৃপ্তি হয়– না, তুমি তাহারও অধিক, তুমি আমার শরীর, আমাতে তোমাতে প্রভেদ আর নাই– না, শরীর না, তুমি শরীরের চেয়েও অধিক, তুমি আমার প্রাণ, সর্ব শরীরকে ব্যাপ্ত করিয়া যাহা রহিয়াছে, যাহার আবির্ভাবে শরীর বাঁচিয়া আছে, শরীরে চৈতন্য আছে, তুমি সেই প্রাণ– রায়বসন্ত কহিলেন, না, তুমি তাহারও অধিক, তুমি প্রাণেরও গুরুতর, তুমি বুঝি প্রাণকে প্রাণ দিয়াছ, তুমি আছ বলিয়াই বুঝি প্রাণ আছে! ঐ যে বলা হইয়াছে “মরমে লাগিছে মধুর মৃদু হাসি!” ইহাতে হাসির