পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
সমালোচনা।

বৈষম্যও আছে। আছে বলিয়াই রক্ষা, তাই সাহিত্যে আদান-প্রদান বাণিজ্য-ব্যবসায় চলে। উত্তাপ যদি সর্ব্বত্র একাকার হইয়া যায়, তাহা হইলে হাওয়া খেলায় না, নদী বহে না প্রাণ টেকে না। একাকার হইয়া যাওয়ার অর্থই পঞ্চত্ব পাওয়া। অতএব আমাদের সাহিত্য যদি বাঁচিতে চায়, তবে ভাল করিয়া বাঙ্গালা হইতে শিখুক।

 ভাবের ভাষার অনুবাদ চলে না। ছাঁচে ঢালিয়া শুষ্ক জ্ঞানের ভাষায় প্রতিরূপ নির্ম্মাণ করা যায়। কিন্তু ভাবের ভাষা হৃদয়ের স্তন্য পান করিয়া, হৃদয়ের সুখদুঃখের দোলায় দুলিয়া মানুষ হইতে থাকে। সুতরাং তাহার জীবন আছে। ছাঁচে ঢালিয়া তাহার একটা নির্জ্জীব প্রতিমা নির্ম্মাণ করা যাইতে পারে, কিন্তু তাহা চলিয়া ফিরিয়া বেড়ইতে পারে না, ও হৃদয়ের মধ্যে পাষাণভারের মত চাপিয়া পড়িয়া থাকে। Force of gravitation-কে ভারাকর্ষণ শক্তি বলিলে কিছুই আসে যায় না। কিন্তু ইংরাজিতে liberty, ও freedom শব্দে যে ভাবটি মনে আসে, বাঙ্গালায় স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য শব্দে ঠিক সে ভাবটি আসে না –কোথায় একটুখানি তফাৎ পড়ে। ইংরাজীতে যেখানে বলে “free as mountain air”, আমরা যদি সেইখানে বলি “পর্ব্বতের বাতাসের মত স্বাধীন”, তাহা হইলে কি কথাটা প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করে? আমরা আজকাল ইংরাজির ভাবের ভাষাকে বাঙ্গালায় অনুবাদ করিতেছি- মনে করিতেছি ইংরাজি ভাবটি বুঝি ঠিক বজায় রাখিলাম– কিন্তু তাহার প্রমাণ কি? আমাদের সাহিত্যে এখন ইংরাজি-ওয়ালারা যাহা লেখেন, ইংরাজি-ওয়ালারাই তাহা পড়েন, ভাবগুলিকে মনে মনে ইংরাজিতে অনুবাদ