পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
সমালোচনা।

মধ্যে নিজের অভাব পূর্ণ হয় না। অবশেষে সে দুঃখে শোকে তাপে জর্জ্জর হইয়া জগতের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া হাঁপ ছাড়ে। এক গণ্ডূষ জলের মধ্যে মাছ ততক্ষণ তিষ্ঠিতে পারে? কিছু দিনের মধ্যেই তাহার খোরাক ফুরাইয়া যায়, জল দূষিত হইয়া পড়ে, সমুদ্রের জন্য তাহার প্রাণ ছট্‌ফট্‌ করে। তখন সমুদ্রে যদি না যাইতে পারে, বড় মাছ হইলে শীঘ্র মরে, ছোট মাছ হইলে কিছু দিন মাত্র টিঁকিয়া থাকে। তেমনি যাহাদের বড় প্রাণ তাহারা বেশি দিন নিজের মধ্যে বন্ধ হইয়া থাকিতে পারে না, জগতে ব্যাপ্ত হইতে চায়। চৈতন্যদেব ইহার প্রমাণ। যাহাদের ছোট প্রাণ তাহারা অনেক দিন নিজেকে লইয়া টিঁকিতে পারে, কিন্তু তাই বলিয়া চিরকাল পারিবে না, অনন্তকালের খো‌রাক আমার মধ্যে নাই। দুর্ভিক্ষে পীড়িত হইয়া তাহারা বাহির হইয়া পড়ে। এত কথা যে বলিলাম তাহা নিম্নলিখিত গানটির মধ্যে আছে।

“ওরে মন পাখী, চাতুরী করবে বলো কত আর!
বিধাতার প্রেমের জালে পড়বে না কি একবার!
সাবধানে ঘুরে ফিরে থাক বাহিরে বাহিরে,
জাল কেটে পালাও উড়ে ফাঁকি দিয়ে বার বার!
তোমায় একদিন ফাঁদে পড়তে হবে, সব চালাকি ঘুচে যাবে–
অন্ন জল বিনে যখন করবে দুঃখে হাহাকার!”

 গ্রন্থে প্রেমের গান এত আছে, এবং এক একটি গান শুনিয়া এত কথা মনে পড়ে, যে, সকল গান তুলিলে, সকল কথা বলিলে পুঁথি বাড়িয়া যায়।