পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমস্যা।
১৩৫

জটিলতার কোন সম্ভাবনা ছিল না। সে সমাজ সবল ছিল কি দুর্ব্বল ছিল সে কথা হইতেছে না, কিন্তু তাহার সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্য ছিল, অর্থাৎ তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সামঞ্জস্য ছিল। কিন্তু এখন সেই সামঞ্জস্য নষ্ট হইয়া গেছে। সেই জন্য বাঁ কান এক শোনে, ডান কান আর শোনে; তুমি মাথা নাড়িতে চাহিলে, তোমার দুই পায়ের দুই বুড় আঙুল নড়িয়া উঠিল! এক করিতে আর হয়।

 আমাদের দেশে ইংরাজি শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের মধ্যে বিজাতীয় প্রভেদ দাঁড়াইয়াছে। সুতরাং স্ত্রী পুরুষের মধ্যে, উচ্চ নীচের মধ্যে, প্রাচীন নবীনের মধ্যে, অর্থাৎ বাপে বেটায়, এক প্রকার জাতিভেদ হইয়াছে! যেখানে জাতিভেদ আছে অথচ নাই, সেখানে কোন কিছুর হিসাব ঠিক থাকে না। দুই বৃক্ষ দুই দিকে যদি মুখ করিয়া থাকে তাহাতে উদ্ভিদ্‌রাজ্যের কোন ক্ষতি হয় না– কিন্তু যেখানে ডালের সঙ্গে গুঁড়ির, আগার সঙ্গে গোড়ার মিল হয় না, সেখানে ফুলের প্রত্যাশা করিতে গেলে আকাশকুসুম পাওয়া যায় এবং ফলের প্রত্যাশা করিতে গেলে কদলীও মিলে না।

 আমাদের সমাজ যদি গাছপাকা হইয়া উঠিত তবে আর ভাবনা থাকিত না; তাহা হইলে আঁঠিতে খোসাতে এত মনান্তর, মতান্তর, অবস্থান্তর থাকিত না। কিন্তু হিন্দুসমাজের শাখা হইতে পাড়িয়া বঙ্গসমাজকে বলপূর্ব্বক পাকানো হইতেছে। ইহার একটা আশু উপকার এই দেখা যায় অতি শীঘ্রই পাক ধরে, গাছে পাঁচ দিনে যাহা হয় এই উপায়ে এক দিনেই তাহা হয়। বঙ্গসমাজেও তাহাই হইতেছে। বঙ্গসমাজের যে অংশে ইংরাজি সভ্যতার তাত লাগিতেছে সেখানটা