পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এক-চোখো সংস্কার।
১৫১

 যদি তুমি বিধবাবিবাহ দিতে প্রস্তুত না থাক,′ তবে বিধবারা যেমন আছে তেমনি থাক্‌। সমাজ যে বিধবাদের উপবাস করিতে বলে, মাছ মাংস খাইতে – বেশভূষা করিতে নিষেধ করে, তাহার কারণ সমাজের খামখেয়ালী অত্যাচারস্পৃহা নহে। সমাজ বিধবাদিগকে বিধবা রাখিবার জন্যই এই কঠোর উপায় অবলম্বন করিয়াছে। যদি তুমি চিরবৈধব্য ব্রত ভালবাস,′ তবে আর এ সম্বন্ধে কথা কহিও না। তুমি মনে করিতেছ ঐ বাঁকাচোরা শিকড়গুলা গাছের কতকগুলা অর্থহীন গলগ্রহ মাত্র; তাহা নয়,– উহারাই আশ্রয়, উহারাই প্রাণ। যদি অসবর্ণ বিবাহে তোমার আপত্তি থাকে, তবে পূর্ব্বরাগমূলক বিবাহকে খবরদার প্রশ্রয় দিও না। ইহা সকলেই জানেন, অনুরাগের হিসাব-কিতাবের জ্ঞান কিছু মাত্র নাই। সে, ঘর বুঝিয়া, দর করিয়া, গোত্র জানিয়া পাত্রবিশেষকে আশ্রয় করে না। তাহার নিকট রাঢ় বারেন্দ্র নাই; গোত্র-প্রভেদ নাই; ব্রাক্ষ্মণ শূদ্র নাই। অতএব অনুরাগের উপর বিবাহের ঘটকালি-ভার অর্পণ করিলে সে জাতি বিজাতিকে একত্র করিবে, ইহা নিশ্চয়। অতএব, হয়, অসবর্ণ বিবাহ দেও, নয়, পিতামাতার প্রতি সন্তানের বিবাহভার থাক্‌। কিন্তু এই পরাধীন বিবাহপ্রথা রক্ষা করিতে হইলে তাহার সঙ্গে সঙ্গে আবার আরো অনেকগুলি আনুষঙ্গিক প্রথা রক্ষা করিতে হয়। যেমন বাল্যবিবাহ ও অবরোধপ্রথা। যদি স্ত্রীলোকেরা অন্তঃপুরের বহির্দ্দেশে বিচরণ করিতে পায়, ও অধিক বয়সে বিবাহপ্রথা প্রচলিত হয়, তবে অসবর্ণ বিবাহ আরম্ভ হইবেই। যখন যৌবনকালে কুমার কুমারী-যুগলের পরস্পরের প্রতি অনুরাগ জন্মাইবে, তখন কি পিতামাতার ও