পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
সমালোচনা।

সে নিজে তাহার মধ্যে আচ্ছন্ন হইয়া প্রতি মুহূর্ত্তে জীর্ণ হইতে থাকিবে।

 বিবেচনা বিচার বুদ্ধির বল সামান্য। তাহা চতুর্দ্দিকে সংশয়ের দ্বারা আচ্ছন্ন, তাহা সংসারের প্রতিকূলতায় শুকাইয়া যায়-অকূলের মধ্যে তাহা ধ্রুবতারার ন্যায় দীপ্তি পায় না। এই জন্যই বলি, সামান্য সুবিধা খুঁজিতে গিয়া মনুষ্যত্বের ধ্রুব উপাদানগুলির উপর বুদ্ধির তীক্ষ্মমুখ ক্ষুদ্র কাঁচি চালনা করিও না। কলস যত বড়ই হউক না, সামান্য ফুটা হইলেই তাহার দ্বারা আর কোন কাজ পাওয়া যায় না। তখন যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহা তোমাকে ডুবায়।

 ধর্ম্মের বল নাকি অনন্তের নির্ঝর হইতে নিঃসৃত, এই জন্যই সে আপাততঃ অসুবিধা, সহস্রবার পরাভব, এমন কি, মৃত্যুকে পর্য্যন্ত ডরায় না। ফলাফল লাভেই বুদ্ধিবিচারের সীমা, মৃত্যুতেই বুদ্ধিবিচারের সীমা— কিন্তু ধর্ম্মের সীমা কোথাও নাই।

 অতএব এই অতি সামান্য বুদ্ধি বিবেচনা বিতর্ক হইতে কি একটি সমগ্র জাতি চিরদিনের জন্য পুরুষানুক্রমে বল পাইতে পারে! একটি মাত্র কূপে সমস্ত দেশের তৃষা নিবারণ হয় না। তাহাও আবার গ্রীষ্মের উত্তাপে শুকাইয়া যায়। কিন্তু যেখানে চিরনিঃসৃত নদী প্রবাহিত সেখানে যে কেবলমাত্র তৃষা-নিবারণের কারণ বর্ত্তমান তাহা নহে, সেখানে সেই নদী হইতে স্বাস্থ্যজনক বায়ু বহে, দেশের মলিনতা অবিশ্রাম ধৌত হইয়া যায়, ক্ষেত্র শস্যে পরিপূর্ণ হয়, দেশের মুখশ্রীতে সৌন্দর্য্য প্রস্ফুটিত হইয়া উঠে। তেমনি বুদ্ধি-বলে কিছু দিনের জন্য সমাজ রক্ষা হইতে পারে, কিন্তু ধর্ম্মবলে চিরদিন সমাজের রক্ষা হয়, আবার