পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একটি পুরাতন কথা
১৫৯

তাহার আনুষঙ্গিকস্বরূপে চতুর্দ্দিক হইতে সমাজের স্ফূর্ত্তি— সমাজের সৌন্দর্য্য ও স্বাস্থ্য-বিকাশ দেখা যায়। বদ্ধগুহায় বাস করিয়া আমি বুদ্ধিবলে রসায়নতত্ত্বের সাহায্যে কোন মতে অক্সিজেন গ্যাস নির্ম্মাণ করিয়া কিছু কাল প্রাণধারণ করিয়া থাকিতেও পারি— কিন্তু মুক্ত বায়ুতে যে চিরপ্রবাহিত প্রাণ, চিরপ্রবাহিত স্ফূর্ত্তি, চিরপ্রবাহিত স্বাস্থ্য ও আনন্দ আছে তাহা ত বুদ্ধিবলে গড়িয়া তুলিতে পারি না। সঙ্গীর্ণতা ও বৃহত্ত্বের মধ্যে যে কেবল মত্রে কম ও বেশী লইয়া প্রভেদ তাহা নহে, তাহার আনুষঙ্গিক ফলাফলের প্রভেদই গুরুতর।

 ধর্ম্মের মধ্যে সেই অত্যন্ত বৃহত্ত্ব আছে— যাহাতে সমস্ত জাতি একত্রে বাস করিয়াও তাহার বায়ু দূষিত করিতে পারে না। ধর্ম্ম অনন্ত আকাশের ন্যায়; কোটি কোনি মনুষ্য পশু পক্ষী হইতে কীট পতঙ্গ পর্য্যন্ত অবিশ্রাম নিশ্বাস ফেলিয়া তাহাকে কলুষিত করিতে পারে না। আর যাহাই আশ্রয় কর না কেন, কালক্রমে তাহা দূষিত ও বিষাক্ত হইবেই। কোনটা বা অল্প দিনে হয়, কোনটা বা বেশী দিনে হয়।

 এই জন্যই বলিতেছি— মনুষ্যত্বের যে বৃহত্তর আদর্শ আছে, তাহাকে যদি উপস্থিত আবশ্যকের অনুরোধে কোথাও কিছু সঙ্কীর্ণ করিয়া লও, তবে নিশ্চয়ই ত্বরায় হউক আর বিলম্বেই হউক, তাহার বিশুদ্ধতা সম্পূর্ণ নষ্ট হইয়া যাইবে। সে আর তোমাকে বল ও স্বাস্থ্য দিতে পারিবে না। শুদ্ধ সত্যকে যদি বিকৃত সত্য, সঙ্কীর্ণ সত্য, আপাততঃ সুবিধার সত্য করিয়া তোল তবে উত্তরোত্তর নষ্ট হইয়া সে মিথ্যায় পরিণত হইবে, কোথাও তাহার পরিত্রাণ নাই। কারণ,