পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
সমালোচনা

মনুষ্যলোকে এমন অঙ্গহীন দেখা যায় যাহার একটা কান নাই, এমন-কি দুইটা কানই খরচ হইয়া গেছে। হে কাক, স্বভাবতই– জন্মাবধিই তোমার কানের অভাব– অতএব কে তোমার কান ধরিয়া শিখাইবে যে তোমার গলাটাই বেসুরা! কিন্তু তবুও ফুল ফোটে কেন, তবুও কোকিল ডাকে কেন? বসন্তের প্রাণের মধ্যে বসিয়া কে এমন একটা তানপুরা বাজাইতেছে, যাহাতে এত বেসুরের মধ্যেও সে অমন সুর ঠিক রাখিতেছে! কিন্তু সুর কি ঠিক থাকে? সাধ কি যায় না গান বন্ধ করি? ক’জনের প্রাণ এমন আছে যাহারা বেতালা বেসুরা সঙ্গতের সহিত- অর্থাৎ অসঙ্গত সঙ্গতের সহিত গান গাহিয়া উঠিতে পারে? কোকিলও তাহা পারে না; যখন বর্ষার সময় ভেকগুলা অসম্ভব ফুলিয়া উঠিয়া জগৎ-সংসারে ভাঙ্গা গলায় নিজের মত জারি করিতে থাকে, তখন কোকিল চুপ করিয়া যায়। আচ্ছা, স্বীকার করিলাম– হে ভেকগণ, তোমাদেরই জয়। তোমরা আরো ফুলিতে থাক, আরো লম্ফ দাও, আরো মক্‌ মক্‌ কর! তোমরা কর্কশ কণ্ঠ লইয়া জগতের গান বন্ধ করিতে পারিয়াছ, অতএব তোমরাই জিতিলে!

 হে বিধাতা, জগতে কাক সৃষ্টি করিয়াছ বলিয়া তোমার দোষ দিই না। কাকের অনেক কাজ আছে। কিন্তু তাহাকে যে কাজ দিয়াছ সেই কাজেই সে লিপ্ত থাকে না কেন? সৌন্দর্য্যপূর্ণ বসন্তের প্রাণের মধ্যে সে কেন তাহার কঠোর কণ্ঠের চঞ্চু বিঁধিতে থাকে?

 কেন? তাহার কারণ, বড় বড় বুদ্ধিমান লোকের সৌন্দর্য্যের উপর বড় একটা বিশ্বাস নাই, সৎ- উদ্দেশ্যের প্রতি অকাট্য সংশয়