পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিজ্ঞতা
২৫

সুন্দর গাহিতেছে – সর্ব্বদা পাহারা দিতে থাক, পাছে মৎলব ধরা না পড়ে- পাছে যাহার মৎলব আছে তাহাকে সরল মনে করিয়া তুমি ঠকিয়া যাও, তুমি নির্ব্বোধ বনিয়া যাও। আমার বুদ্ধিমান হইয়া কাজ নাই, আমি চিরকাল ঠকিব, আমি চিরকাল নির্ব্বোধ হইয়া থাকিব! আমি সুন্দরকে উপভোগ করিতে চাই, আমি সৌন্দর্য্যকে বিশ্বাস করিতে চাই। আমি ঠকিতে চাই, কারণ এ স্থলে ঠকিলেও লাভ। আর, সব চেয়ে লোকসান হয় তোমারই! তোমার ঐ বুদ্ধির টেরা চোখ দুটার উপর অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করিয়া প্রকৃতিকে বাঁকা দেখিতেছ – সে কি তোমার বড় সুখের কারণ হইয়াছে? তাহার চেয়ে কি তোমার ঐ চোখ দুটি অন্ধ হইলেই ভাল ছিল না?

 তোমাদের সুখ ত ভারী দেখিতেছি! তোমরা প্রাণ খুলিয়া হাসিতে পার’ না, প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করিতে পার না, প্রাণ খুলিয়া পরকে বিশ্বাস করিতে পার না। ‘যদি’ ‘কিন্তু’ ‘কদাচ’ ‘কিঞ্চিৎ’ প্রভৃতি কথাগুলা ব্যবহার করিয়া কৃপণের দড়ি-বাঁধা টাকার থলির মুখের মত তোমাদের ভাষাকে কুঞ্চিত সঙ্কুচিত করিয়া তুলিয়াছ। ইহাকেই তোমরা বিজ্ঞতার লক্ষণ মনে কর। ভাল লোককে ‘হম্বগ’ মনে করা, ভদ্রতাকে হীনতা মনে করা, যে তোমাদের নিজের মতাবলম্বী নয় তাহাকে অশিক্ষিত অপদার্থ মনে করা, যশস্বী লোকের যশকে ফাঁকি মনে করা, তোমাদের অপেক্ষা শত গুণে বিদ্বান লোকের বিদ্যার গভীরতা নাই বলিয়া লোকের কাছে প্রচার করা, কিঞ্চিৎ হাতে রাখিয়া মত ব্যক্ত করা, নিজেকে ভারী এক জন মস্ত লোক মনে করা, এই সকলকে তোমরা বিজ্ঞতার লক্ষণ বলিয়া জান।