পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিজ্ঞতা।
২৭

পাঁকে সৎপথগামী সাধুর পা বসিয়া গেছে, সে পাঁকের জাঁক করিবার বিষয় কিছুই নাই। সংশয় করিয়া, বিদ্রূপ করিয়া, অসৎ অভিসন্ধি আবিষ্কার করিয়া অনেক বিজ্ঞ অনেক সৎকার্যকে অঙ্কুরে দলিত করিয়া দিয়াছেন, অনেক তরুণ হৃদয়ের নবীন আশাকে তাঁহাদের হাস্যের বিদ্যুতাঘাতে চিরকালের জন্য দগ্ধ করিয়াছেন, অনেক উন্মুখ প্রতিভাকে নিষ্ঠুর ভাবে পীড়ন করিয়া হয়তো পৃথিবীর এক-একটা শতাব্দীকে অনুর্ব্বর মরুময় করিয়া দিয়াছেন– ইহারা যদি এই সকল দলিত অঙ্কুর, দগ্ধ আশা, ভগ্ন হৃদয় স্তূপাকৃতি করিয়া নিজের কীর্ত্তিস্তম্ভ রচনা করেন, তবে কি কোনো পিরামিড আয়তনে তাহার সমকক্ষ হইতে পারে? রোগ দুর্ভিক্ষের সহোদর বিজ্ঞতা শ্মশানের ভস্ম দিয়া একটা উৎসবাগার নির্মাণ করিয়াছে, সেখানে অস্থিকঙ্কালের নৃত্য হইতেছে, হৃদয়শোণিতের মদ্যপান চলিতেছে, খরধার রসনাখড়্গে আশা-উদ্যমের বলি হইতেছে। আইস, যাহাদের হৃদয় আছে, আমরা প্রকৃতিমাতার উৎসবালয়ে যাই। সেখানে জীবনের অভিনয় হইতেছে, সেখানে সৌন্দর্যের উৎস উৎসারিত হইতেছে, সেখানে মাপাজোকা কার্পণ্য নাই, সেখানে বাঁকাচোরা অনুদারতা নাই– সেখানে দুইমুখা প্রাণ নাই। এ সকল বিজ্ঞলোকদের সহিত আমাদের পোষাইবে না– আমরা ইহাদের চিনিতে পারিব না, ইহাদের কথা ভাল বুঝিতে পারিব না– ইহারা উপদেশ দিবার সময় বড়ো বড়ো নীতিকথা বলে, কিন্তু ইহাদের মনে পাপ আছে, ইহাদের সর্বাঙ্গে সংক্রামক রোগ!