পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মেঘনাদবধ কাব্য
৩১

নিদারুণ অশুভ বিবাহের প্রথম বাসরের রাত্রি মাত্র দেখিতে পাইলাম–বাকীটুকু কেবল চোখ বুজিয়া ভাবিলাম-ইহাই ট্র্যাজেডি। অনেকে জানেন না, সমস্তটা নিকাশ করিয়া ফেলিলে অনেক সময় ট্র্যাজেডির ব্যাঘাত হয়। অনেক সময় সেমিকোলনে যতটা ট্র্যাজেডি থাকে দাঁড়িতে ততটা থাকে না। কিন্তু যাঁহারা না বুঝিয়া ট্র্যাজেডি লিখিতে যান তাঁহারা কাব্যের আরম্ভ হইতেই বিষ ফরমাস্‌ দেন, ছুরি শানাইতে থাকেন, ও চিতা সাজাইতে সুরু করেন।

 এপিক্‌ (epic) শব্দটা লইয়াও এইরূপ গোলযোগ হইয়া থাকে। এপিক্‌ বলিতে লোকে সাধারণতঃ বুঝিয়া থাকে একটা মারামারি কাটাকাটির ব্যাপার! যাহাতে যুদ্ধ নাই তাহা আর এপিক্‌ হইবে কি করিয়া? আমরা যতগুলি বিখ্যাত এপিক্‌ দেখিয়াছি তাহার প্রায় সবগুলিতেই যুদ্ধ আছে সত্য কিন্তু তাহাই বলিয়া এমন প্রতিজ্ঞা করিয়া বসা ভাল হয় না, যে, যুদ্ধ ছাড়িয়া যদি কেহ এপিক্‌ লেখে তবে তাহাকে এপিক্‌ বলিব না! এপিক্‌ কাব্য লেখার আরম্ভ হইল কি হইতে? কবিরা এপিক্‌ লেখেন কেন? এখনকার কবিরা যেমন “এস একটা এপিক্‌ লেখা যাক” বলিয়া সরস্বতীর সহিত বন্দোবস্ত করিয়া এপিক্‌ লিখিতে বসেন, প্রাচীন কবিদের মধ্যে অবশ্য সে ফেসিয়ান ছিল না।

 মনের মধ্যে যখন একটা বেগবান অনুভাবের উদয় হয়, তখন কবিরা তাহা গীতিকাব্যে প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারেন না। তেমনি মনের মধ্যে যখন একটি মহৎব্যক্তির উদয় হয়, সহসা যখন একজন পরমপুরুষ কবিদের কল্পনার রাজ্য অধিকার করিয়া বসেন,