পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪২
সমালোচনা

ভাববিশেষ ভাষায় প্রকাশ করে না সেও কবি নহে। যাঁহারা ‘নীরব কবি’ কথার সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহারা বিশ্বচরাচরকে কবিতা বলেন। এ-সকল কথা কবিতাতেই শোভা পায়। কিন্তু অলঙ্কারশূন্য গদ্যে অথবা তর্কস্থলে বলিলে কি ভাল শুনায়? একটা নামকে এরূপ নানা অর্থে ব্যবহার করিলে দোষ হয় এই যে, তাহার দুইটা ডানা বাহির হয়, এক স্থানে ধরিয়া রাখা যায় না ও ক্রমে ক্রমে হাতছাড়া এবং সকল কাজের বাহির হইয়া বুনো হইয়া দাঁড়ায়, “আয়” বলিয়া ডাকিলেই খাঁচার মধ্যে আসিয়া বসে না। আমার কথাটা এই যে, আমার মনে আমার প্রেয়সীর ছবি আঁকা আছে বলিয়াই আমি কিছু চিত্রকর নই ও ক্ষমতা থাকিলেই আমার প্রেয়সীকে আঁকা যাইতে পারিত বলিয়া আমার প্রেয়সী একটি চিত্র নহেন।

 অনেকে বলেন, সমস্ত মনুষ্যজাতি সাধারণতঃ কবি ও বালকেরা অশিক্ষিত-লোকেরা বিশেষরূপে কবি। এ মতের পূর্ব্বোক্ত মতটির ন্যায় তেমন বহুল প্রচার হয় নাই। তথাপি তর্ককালে অনেকেরই মুখে এ কথা শুনা যায়। বালকেরা যে কবি নয়, তাহার প্রমাণ পূর্ব্বেই দেওয়া হইয়াছে। তাহারা কবিতাময় ভাষায় ভাব প্রকাশ করে না। অনেকে কবিত্ব অনুভব করেন, কবিত্ব উপভোগ করেন, যদি বা বলপূর্ব্বক তুমি তাঁহাদিগকেও কবি বল তথাপি বালকদিগকে কবি বলা যায় না। বালকেরা কবিত্ব অনুভব করে না, কবিত্ব উপভোগ করে না; অর্থাৎ, বয়স্ক লোকদের মত করে না। অনুভব ত সকলেই করিয়া থাকে, পশুরাও ত সুখ দুঃখ অনুভব করে।