পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সঙ্গীত ও কবিতা।
৫১

যেমন ভাবের ভাষা সংগীতও তেমনি ভাবের ভাষা। তবে, কবিতা ও সংগীতে প্রভেদ কি? আলোচনা করিয়া দেখা যাক্‌।

 আমরা সচরাচর যে ভাষায় কথা কহিয়া থাকি তাহা যুক্তির ভাষা। “হাঁ” কি “না”, ইহা লইয়াই তাহার কারবার। “আজ এখানে গেলাম”, “কাল সেখানে গেলাম”, “আজ সে আসিয়াছিল”, “কাল সে আসে নাই”, “ইহা রূপা”, “উহা সোনা” ইত্যাদি। এ সকল কথার উপর যুক্তি চলে। “আজ আমি অমুক জায়গায় গিয়াছিলাম” ইহা আমি নানা যুক্তির দ্বারা প্রমাণ করিতে পারি। দ্রব্যবিশেষ রূপা কি সোনা ইহাও নানা যুক্তির সাহায্যে আমি অন্যকে বিশ্বাস করাইয়া দিতে পারি। অতএব, সচরাচর আমরা যে সকল বিষয়ে কথোপকথন করি, তাহা বিশ্বাস করা না-করা যুক্তির ন্যূনাধিক্যের উপর নির্ভর করে। এই সকল কথোপকথনের জন্য আমাদের প্রচলিত ভাষা, অর্থাৎ গদ্য নিযুক্ত রহিয়াছে।

 কিন্তু বিশ্বাস করাইয়া দেওয়া এক, আর উদ্রেক করাইয়া দেওয়া স্বতন্ত্র। বিশ্বাসের শিকড় মাথায়, আর উদ্রেকের শিকড় হৃদয়ে। এইজন্য, বিশ্বাস করাইবার জন্য যে ভাষা উদ্রেক করাইবার জন্য সে ভাষা নহে। যুক্তির ভাষা গদ্য আমাদের বিশ্বাস করায়, আর কবিতার ভাষা পদ্য আমাদের উদ্রেক করায়। যে সকল কথায় যুক্তি খাটে তাহা অন্যকে বুঝানো অতিশয় সহজ; কিন্তু যাহাতে যুক্তি খাটে না, যাহা যুক্তির আইন-কানুনের মধ্যে ধরা দেয় না, তাহাকে বুঝানো সহজ ব্যাপার নহে। “কেন” নামক একটা চশমা চক্ষু দুর্দ্দান্ত রাজাধিরাজ যেমনি কৈফিয়ৎ তলব করেন,