পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সঙ্গীত ও কবিতা।
৫৩

 আমি যাহা বিশ্বাস করিতেছি তোমাকে তাহাই বিশ্বাস করান, আর আমি যাহা অনুভব করিতেছি তোমাকে তাহাই অনুভব করান’– এ দুইটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ব্যাপার। আমি বিশ্বাস করিতেছি একটি গোলাপ সুগোল, আমি তাহার চারি দিক মাপিয়া-জুকিয়া তোমাকে বিশ্বাস করাইতে পারি যে গোলাপ সুগোল– আর, আমি অনুভব করাইতে পারি না যে গোলাপ সুন্দর। তখন কবিতার সাহায্য অবলম্বন করিতে হয়। গোলাপের সৌন্দর্য্য আমি যে উপভোগ করিতেছি তাহা এমন করিয়া প্রকাশ করিতে হয়, যাহাতে তোমার মনেও সে সৌন্দর্য্যভাবের উদ্রেক হয়। এইরূপ প্রকাশ করাকেই বলে কবিতা। চোখে চোখে চাহনির মধ্যে যে যুক্তি আছে, যাহাতে করিয়া প্রেম ধরা পড়ে– অতিরিক্ত যত্ন করার মধ্যে যে যুক্তি আছে, যাহাতে করিয়া প্রেমের অভাব ধরা পড়ে- কথা না কহার মধ্যে যে যুক্তি আছে, যাহাতে অসীম কথা প্রকাশ করে– কবিতা সেই-সকল যুক্তি ব্যক্ত করে।

 সচরাচর কথোপকথনে যুক্তির যতটুকু আবশ্যক তাহারই চূড়ান্ত আবশ্যক দর্শনে বিজ্ঞানে। এই নিমিত্ত দর্শন বিজ্ঞানের গদ্য কথোপকথনের গদ্য হইতে অনেক তফাৎ। কথোপকথনের গদ্যে দর্শন বিজ্ঞান লিখিতে গেলে যুক্তির বাঁধুনি আল্‌গা হইয়া যায়। এই নিমিত্ত খাঁটি নিভাঁজ যুক্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করিবার জন্য এক প্রকার চুল-চেরা তীক্ষ্ম পরিষ্কার ভাষা নির্ম্মাণ করিতে হয়। কিন্তু তথাপি সে ভাষা গদ্য বৈ আর কিছু নয়। কারণ, যুক্তির ভাষাই নিরলঙ্কার সরল পরিষ্কার গদ্য।