পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭০
সমালোচনা।

একটি ভাগকে তিনি স্নেহ করেন, আর একটি ভাগকে তিনি ভক্তি করেন। প্রথম সম্ভাষণ স্নেহের সম্ভাষণ, দ্বিতীয় সম্ভাষণ ভক্তির। তাঁহার কবিতার এই উভয় ভাগেই কবি অনেকদূর পর্যন্ত দৃষ্টি প্রসারিত করিয়াছেন; এক দিগন্ত হইতে আর-এক দিগন্তে দৃষ্টিপাত করিয়াছেন।

 প্রথম ভাগ। প্রথম, শিশু জন্মাইতেই তিনি ভাবিলেন, এ কোথা হইতে আসিল? বৈদিক ঋষি-কবিরা মহা-অন্ধকারের রাজ্য হইতে দিগন্তপ্রসারিত সমুদ্রগর্ভ হইতে তরুণ সূর্যকে উঠিতে দেখিয়া যেমন সসম্ভ্রমে জিজ্ঞাসা করিতেন ‘এ কোথা হইতে আসিল’ তেমনি সসম্ভ্রমে কবি জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কোথা হইতে আসিল? তিনি বর্তমান দেশকালের বন্ধনসীমা অতিক্রম করিয়া কত দূরে কত উচ্চে অতীতের মহাগঙ্গোত্রীশিখরের দিকে ধাবমান হইলেন। কবির বিচরণের স্থান এমন আর কোথায়? তিনি দেখিলেন, এই শিশুটি যে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছে সেই পৃথিবীরই সহোদর। মহাসৌরজগতের যমজ ভ্রাতা। তিনি তাহাকে সম্ভাষণ করিয়া কহিলেন, “বৎস আমার, মহাসমুদ্র হইতে, যেখানে যাহা-কিছু- ছিল’র মধ্যে যাহা-কিছু-হইবে (অর্থাৎ অতীতের মধ্যে ভবিষ্যৎ, অপরিস্ফুটতার মধ্যে পরিস্ফুটতা) কোটি কোটি যুগ যুগান্তর ধরিয়া অগণ্য আবর্তমান জ্যোতিঃপুঞ্জের মহামরুর মধ্যে ঘূর্ণ্যমান হইতেছিল, তুমি সেইখান হইতে আসিতেছ। সেইখান হইতেই সূর্য আসিয়াছে, পৃথিবী ও চন্দ্র আসিয়াছে, এবং তাহার অন্যান্য গ্রহ সহোদরগণ আসিয়াছে।” অতীতের সেই উষাগর্ভে কবি প্রবেশ করি