পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮২
সমালোচনা।

লক্ষ লোকের সমষ্টি নহে। এখন শাসনতন্ত্র আলোচনা করিতে হইলে একটি রাজার খেয়াল শিক্ষা ও মনোভাব আলোচনা করিলে চলিবে না; এখন অনেকটা দেখিতে হইবে, অনেককে দেখিতে হইবে। এখন যদি তুমি একটা যন্ত্রের একটা অংশ মাত্র দেখিয়া বল যে, এ তো খুব অল্প কাজই করিতেছে, তাহা হইলে তুমি ভ্রমে পড়িবে। সে যন্ত্রের সকল অঙ্গই পর্যবেক্ষণ করিতে হইবে।

 এখনকার সভ্য সমাজে দশটাকে মনে মনে তেরিজ কষিয়া একটাতে পরিণত কর। কবিতাও সে নিয়মের বহির্‌ভূত নহে। সভ্য দেশের কবিতা এখন যদি তুমি আলোচনা করিতে চাও তবে একটা কাব্য, একটি কবির দিকে চাহিয়ো না। যদি চাও তো বলিবে “এ কী হইল! এ তো যথেষ্ট হইল না! এ দেশে কি তবে এই কবিতা?” বিরক্ত হইয়া হয়তো প্রাচীন সাহিত্য অন্বেষণ করিতে যাইবে। যদি মহাভারত কি রামায়ণ কি গ্রীসীয় একটা কোনো মহাকাব্য নজরে পড়ে, তবে বলিবে, “পর্যাপ্ত হইয়াছে! প্রচুর হইয়াছে!” এক মহাভারত বা এক রামায়ণ পড়িলেই তুমি প্রাচীন সাহিত্যের সমস্ত ভাবটি পাইলে। কিন্তু এখন সেদিন গিয়াছে। এখন একখানা কবিতার বইকে আলাদা করিয়া পড়িলে পাঠের অসম্পূর্ণতা থাকিয়া যায়। মনে কর ইংলণ্ড। ইংলণ্ডে যত কবি আছে সকলকে মিলাইয়া লইয়া এক বলিয়া ধরিতে হইবে। ইংলণ্ডে যে কবিতা-পাঠক-শ্রেণী আছেন, তাঁহাদের হৃদয়ের এক-একটা মহাকাব্য রচিত হইতেছে। তাঁহারা বিভিন্ন কবির বিভিন্ন কাব্যগুলি মনের মধ্যে একত্রে বাঁধাইয়া রাখিতেছেন। ইংলণ্ডের সাহিত্যে মানবহৃদয়-নামক একটা বিশাল মহাকাব্য রচিত