পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
সমালোচনা।

সকল ছায়াশরীরী মৃদুস্পর্শ কল্পনা খেলায় যাহা পুরাতন লোকদের মনেই আসিত না ও সাধারণ লোকেরা ধরিতে ছুঁইতে পারে না– এমন-সকল গূঢ়তম তত্ত্ব কবিতায় নিহিত থাকে যাহা সাধারণতঃ সকলে কবিতার অতীত বলিয়া মনে করে। প্রাচীন কালে কবিতায় কেবল নলিনী মালতী মল্লিকা যুঁথি জাতি প্রভৃতি কতকগুলি বাগানের ফুল ফুটিত, আর কোন ফুলকে যেন কেহ কবিতার উপযুক্ত বলিয়াই মনে করিত না; আজ কাল কবিতায় অতি ক্ষুদ্রকায়া, সাধারণতঃ চক্ষুর অগোচর, তৃণের মধ্যে প্রস্ফুটিত সামান্য বনফুলটি পর্য্যন্ত ফুটে। এক কথায়– যাহাকে লোকে, অভ্যস্ত হইয়াছে বলিয়াই হউক বা চক্ষুর দোষেই হউক, অতি সামান্য বলিয়া দেখে বা একেবারে দেখেই না, এখনকার কবিতা তাহার অতি বৃহৎ গূঢ়ভাব খুলিয়া দেখায়। আবার যাহাকে অতিবৃহৎ অতি- অনায়ত্ত বলিয়া লোকে ছুঁইতে ভয় করে, এখনকার কবিতায় তাহাকেও আয়ত্তের মধ্যে আনিয়া দেয়। অতএব এখনকার উপযোগী মহাকাব্য একজনে লিখিতে পারে না, একজনে লিখেও না।

 এখন শ্রমবিভাগের কাল। সভ্যতার প্রধান ভিত্তিভূমি শ্রমবিভাগ। কবিতাতেও শ্রমবিভাগ আরম্ভ হইয়াছে। শ্রমবিভাগের আবশ্যক হইয়াছে।

 পূর্বে একজন পণ্ডিত না জানিতেন এমন বিষয় ছিল না। লোকেরা যে বিষয়েই প্রশ্ন উত্থাপন করিত, তাঁহাকে সেই বিষয়েই উত্তর দিতে হইত, নহিলে আর তিনি পণ্ডিত কিসের? এক অরিষ্টটল দর্শনও লিখিয়াছেন, রাজ্যনীতিও লিখিয়াছেন, আবার ডাক্তারিও লিখিয়াছেন। তখনকার সমস্ত বিদ্যাগুলি হ-য-ব-র-ল হইয়া একত্রে ঘেঁষাঘেঁষি