পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি।

 নিজের প্রাণের মধ্যে, পরের প্রাণের মধ্যে ও প্রকৃতির প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করিবার ক্ষমতাকেই বলে কবিত্ব। যাহারা প্রকৃতির বহির্‌দ্বারে বসিয়া কবি হইতে যায় তাহারা কতকগুলা বড়ো বড়ো কথা, টানাবোনা তুলনা ও কাল্পনিক ভাব লইয়া ছন্দ নির্মাণ করে। মর্মের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য যে কল্পনা আবশ্যক করে তাহাই কবির কল্পনা; আর গোঁজামিলন দিবার কল্পনা – না পড়িয়া পণ্ডিত হইবার– না অনুভব করিয়া কবি হইবার এক প্রকার গিল্‌‍টি-করা কল্পনা আছে, তাহা জালিয়াতের কল্পনা। যিনি প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কবি হইয়াছেন তিনি সহজ কথার কবি, সহজ ভাবের কবি। কারণ, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তাহাকে দশ কথা বলিতে হয়, আর যিনি সত্য বলেন তাঁহাকে এক কথার বেশি বলিতে হয় না। তেমনি যিনি অনুভব করিয়া বলেন তিনি দুটি কথা বলেন, আর যে অনুভব না করিয়া বলে সে পাঁচ কথা বলে অথচ ভাব প্রকাশ করিতে পারে না। অতএব সহজ ভাষার, সহজ ভাবের, সহজ কবিতা লেখাই শক্ত, কারণ তাহাতে প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিতে হয়। সকলের প্রাণের মধ্যেই যে ব্যক্তি আতিথ্য পায়– ফুল বলো, মেঘ বলো, দুঃখী বলো, সুখী বলো, সকলের প্রাণের মধ্যেই যাহার আসন আছে, সেই তাহা পারে। আর বড়ো বড়ো কথার মোটা মোটা ভাবের কবিতা লেখা