পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বদেশী সমাজ।
১৩

তাহারা প্রত্যেকে আপনাকে উৎসর্গ করিতেছে। এইরূপে আমাদের পুরাকালে প্রত্যেক ক্ষত্রসৈন্য আপন রাজাকে বা প্রভুকে অবলম্বন করিয়া ক্ষাত্রধর্ম্মের কাছে আপনাকে নিবেদন করিত-রণক্ষেত্রে তাহারা শতরঞ্জ-খেলার দাবাবােড়ের মত মরিত না—মানুষের মত হৃদয়ের সম্বন্ধ লইয়া, ধর্ম্মের গৌরব লইয়া মরিত। ইহাতে যুদ্ধব্যাপার অনেক সময়েই বিরাট, আত্মহত্যার মত হইয়া দাঁড়াইত—এবং এইরূপ কাণ্ডকে পাশ্চাত্য সমালােচকেরা বলিয়া থাকেন—“ইহা চমৎকার—কিন্তু ইহা যুদ্ধ নহে!” জাপান এই চমৎকারিত্বের সঙ্গে যুদ্ধকে মিশাইয়া প্রাচ্য-প্রতীচ্য উভয়েরই কাছে ধন্য হইয়াছেন।

 যাহা হউক্, এইরূপ আমাদের প্রকৃতি। প্রয়ােজনের সম্বন্ধকে আমরা হৃদয়ের সম্বন্ধ দ্বারা শােধন করিয়া লইয়া তবে ব্যবহার করিতে পারি। সুতরাং অনাবশ্যক দায়িত্বও আমাদিগকে গ্রহণ করিতে হয়। প্রয়োজনের সম্বন্ধ সঙ্কীর্ণ;—আপিসের মধ্যেই তাহার শেষ। প্রভুভৃত্যের মধ্যে যদি কেবল প্রভুভৃত্যের সম্বন্ধটুকুই থাকে, তবে কাজ আদায় এবং বেতনদানের মধ্যেই সমস্ত চুকিয়া যায়, কিন্তু তাহার মধ্যে কোনােপ্রকার আত্মীয়সম্বন্ধ স্বীকার করিলেই দায়িত্বকে পুত্রকন্যার বিবাহ এবং শ্রদ্ধশান্তি পর্য্যন্ত টানিয়া- লইয়া যাইতে হয়।

 আমার কথার আর-একটা আধুনিক দৃষ্টান্ত দেখুন। আমি রাজশাহী ও ঢাকার প্রােভিন‌্শ্যাল‌্ কন‌্ফারেন্সে উপস্থিত ছিলাম। এই কনফারেন্স‌্ ব্যাপারকে আমরা একটা গুরুতর কাজের জিনিষ বলিয়া মনে করি, সন্দেহ নাই—কিন্তু আশ্চর্য্য এই দেখিলাম, ইহার মধ্যে কাজের গরজের চেয়ে অতিথিসৎকারের ভাবটাই সুপরিস্ফুট। যেন বরযাত্রীদল গিয়াছি-আহার-বিহার আরাম-আমােদের জন্য দাবী ও উপদ্রব এতই অতিরিক্ত যে, তাহা আহ্বান-কর্তাদের পক্ষে প্রায় প্রাণান্তকর। যদি তাহারা বলিতেন, তােমরা নিজের দেশের কাজ করিতে আসিয়াছ,