পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
সমূহ

জের ঐক্যটা কোন‌্খানে? সুস্পষ্ট উত্তর দেওয়া কঠিন। সুবৃহৎ পরিধির কেন্দ্র খুঁজিয়া পাওয়াও তেম‌্নি কঠিন—কিন্তু কেন্দ্র তাহার আছেই। ছােট গােলকের গােলত্ব বুঝিতে কষ্ট হয় না, কিন্তু গােল পৃথিবীকে যাহারা খণ্ড খণ্ড করিয়া দেখে, তাহারা ইহাকে চ্যাপ্টা বলিয়াই অনুভব করে। তেমনি হিন্দুসমাজ নানা পরস্পর-অসঙ্গত বৈচিত্রকে এক করিয়া লওয়াতে তাহার ঐক্যসূত্র নিগূঢ় হইয়া পড়িয়াছে। এই ঐক্য অঙ্গুলির দ্বারা নির্দ্দেশ করিয়া দেওয়া কঠিন, কিন্তু ইহা সমন্ত আপাত-প্রতীয়মান বিরােধের মধ্যেও দৃঢ় ভাবে যে আছে, তাহা আমরা স্পষ্টই উপলব্ধি করিতে পারি।

 ইহার পরে এই ভারতবর্ষেই মুসলমানের সংঘাত আসিয়া উপস্থিত হইল। এই সংঘাত সমাজকে যে কিছুমাত্র আক্রমণ করে নাই, তাহা বলিতে পারি না। তখন হিন্দুসমাজে এই পরসংঘাতের সহিত সামঞ্জস্যসাধনের প্রক্রিয়া সর্ব্বত্রই আরম্ভ হইয়াছিল। হিন্দু ও মুসলমানসমাজের মাঝখানে এমন একটি সংযােগস্থল সৃষ্ট হইতেছিল, যেখানে উভয় সমাজের সীমারেখা মিলিয়া আসিতেছিল; নানকপন্থী, কবিরপন্থী ও নিম্নশ্রেণীর বৈষ্ণবসমাজ ইহার দৃষ্টান্ত স্থল। আমাদের দেশে সাধারণের মধ্যে নানাস্থানে ধর্ম ও আচার লইয়া যে সকল ভাঙাগড়া চলিতেছে, শিক্ষিতসম্প্রদায় তাহার কোনাে খবর রাখেন না। যদি রাখিতেন ত দেখিতেন, এখনন ভিতরে ভিতরে এই সামঞ্জস্যসাধনের সজীব প্রক্রিয়া বন্ধ নাই। সম্প্রতি আর এক প্রবল বিদেশী আর-এক ধর্ম্ম, আচারব্যবহার ও শিক্ষাদীক্ষা লইয়া আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। এইরূপে পৃথিবীতে যে চারি প্রধান ধর্মকে আশ্রয় করিয়া চার বৃহৎসমাজ আছে—হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খৃষ্টান,—তাহারা সকলেই ভারতবর্ষে আসিয়া মিলিয়াছে। বিধাতা বেন একটা বৃহৎ সামাজিক সম্মিলনের জন্য ভারতবর্ষেই একটা বড় রাসায়নিক কারখানাঘর খুলিয়াছেন।

 এখানে একটা কথা আমাকে স্বীকার করিতে হইবে যে, বৌদ্ধ-