পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
সমূহ।

 শুধু এই নয়, কোনাে কোনাে সামাজিক প্রথাকে অনিষ্টকর জ্ঞান করিয়া, আমরা ইংরাজের আইনকে ঘাঁটাইয়া তুলিয়াছি, তাহাও কাহারো অগােচর নাই। যেদিন কোনাে পরিবারে সন্তানদিগকে চালনা করিবার জন্য পুলিস্‌ম্যান ডাকিতে হয়, সেদিন আর পরিবাররক্ষার চেষ্টা কেন? সেদিন বনবাসই শ্রেয়।

 মুসলমানসমাজ আমাদের এক পাড়াতেই আছে এবং খৃষ্টানসমাজ আমাদের সমাজের ভিতের উপর বন্যার মত ধাক্কা দিতেছে। প্রাচীন শাস্ত্রকারদের সময়ে এ সমস্যাটা ছিল না। যদি থাকিত, তবে তাহারা হিন্দুসমাজের সহিত এই সকল পরসমাজের অধিকার নির্ণয় করিতেন—এমনভাবে করিতেন, যাহাতে পরস্পরের মধ্যে নিয়ত বিরােধ ঘটিত না। এখন কথায় কথায় ভিন্ন ভিন্ন পক্ষে দ্বন্দ্ব বাধিয়া উঠিতেছে, এই দ্বন্দ্ব-অশান্তি, অব্যবস্থা ও দুর্বলতার কারণ।

 যেখানে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব বাধিতেছে না, সেখানে ভিতরে ভিতরে অলক্ষিত ভাবে সমাজ বিশ্লিষ্ট হইয়া পড়িতেছে। এই ক্ষয়রােগও সাধারণ রােগ নহে। এইরূপে সমাজ পরের সঙ্গে আপনার সীমানানির্ণয়সম্বন্ধে কোনাে কর্ত্তৃত্বপ্রকাশ করিতেছে না; নিজের ক্ষয়নিবারণের প্রতিও তাহার কর্ত্তৃত্ব জাগ্রত নাই। যাহা আপনি হইতেছে, তাহাই হইতেছে; —যখন ব্যাপারটা অনেকদূর অগ্রসর হইয়া পরিস্ফুট হইতেছে, তখন মাঝে মাঝে হাল ছাড়িয়া বিলাপ করিয়া উঠিতেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিলাপে কেহ বন্যাকে ঠেকাইতে পারে নাই এবং রােগের চিকিৎসাও বিলাপ নহে।

 বিদেশী শিক্ষা, বিদেশী সভ্যতা আমাদের মনকে, আমাদের বুদ্ধিকে যদি অভিভূত করিয়া না ফেলিত, তবে আমাদের সামাজিক স্বাধীনতা এত সহজে লুপ্ত হইতে বসিত না।

 গুরুতর রােগে যখন রােগীর মস্তিষ্ক বিকল হয়, তখনি ডাক্তার ভয়