পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
সমূহ।

আপনাকে সবল ও সচল করিয়া তোলে, তবে রাষ্ট্রীয় পরাধীনতা ও অন্য সকল দুর্গতি তুচ্ছ হইয়া যাইবে। সমাজের সচেষ্ট স্বাধীনতা অন্য সকল স্বাধীনতা হইতেই বড়।

 জীবনের পরিবর্ত্তন বিকাশ, মৃত্যুর পরিবর্ত্তন বিকার। আমাদের সমাজেও দ্রুতবেগে পরিবর্ত্তন চলিতেছে, কিন্তু সমাজের অভ্যন্তরে সচেতন অন্তঃকরণ নাই বলিয়া, সে পরিবর্ত্তন বিকার ও বিশ্লেষণের দিকে যাইতেছে—কেহ তাহা ঠেকাইতে পারিতেছে না।

 সজীব পদার্থ সচেষ্টভাবে বাহিরের অবস্থাকে নিজের অনুকূল করিয়া আনে—আর নির্জীব পদার্থকে বাহিরের অবস্থাই সবলে আঘাত করিয়া নিজের আয়ত্ত করিয়া লয়। আমাদের সমাজে যাহা কিছু পরিবর্ত্তন হইতেছে, তাহাতে চেতনার কার্য্য নাই; তাহাতে বাহিরের সঙ্গে ভিতরের সঙ্গে কোন সামঞ্জস্যচেষ্টা নাই—বাহির হইতে পরিবর্ত্তন ঘাড়ের উপব আসিয়া পড়িতেছে এবং সমাজের সমস্ত সন্ধি শিথিল করিয়া দিতেছে।

 নূতন অবস্থা, নূতন শিক্ষা, নূতন জাতির সহিত সংঘর্ষ—ইহাকে অস্বীকার করা যায় না। আমরা যদি এমন ভাবে চলিতে ইচ্ছা করি, যেন ইহারা নাই, যেন আমরা তিনসহস্র বৎসর পূর্ব্বে বসিয়া আছি, তবে সেই তিনসহস্র বৎসর পূর্ব্বকার অবস্থা আমাদিগকে কিছুমাত্র সাহায্য করিবে না এবং বর্ত্তমান পরিবর্ত্তনের বন্যা আমাদিগকে ভাসাইয়া লইয়া যাইবে। আমরা বর্ত্তমানকে স্বীকারমাত্র না কবিয়া পূর্ব্বপুরুষের দোহাই মানিলেও পূর্ব্বপুরুষ সাড়া দিবেন না।

 আমাদের এই নিষ্ক্রিয়-নিশ্চেষ্ট অবস্থা কেন ঘটিয়াছে, আমার প্রবন্ধে তাহার কারণ দেখাইয়াছি। তাহার কারণ ভীরুতা। আমাদের যাহা-কিছু ছিল, তাহারই মধ্যে কুঞ্চিত হইয়া থাকিবার চেষ্টাই বিদেশীসভ্যতার আঘাতে আমাদের অভিভূত হইবার কারণ।