পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশনায়ক।
৪১

বাজাইয়া লয়। এই দেশব্যাপী ভীষণ দুঃখের সম্বন্ধে আমরা কিরূপ ব্যবহার করিলাম, তাহাতেই আমাদের মনুষ্যত্বের যথার্থ পরিচয়। এই দুঃখের কৃষ্ণ-কঠিন নিকষপাথরের উপরে আমাদের দেশানুরাগ যদি উজ্জ্বল রেখাপাত করিয়া না থাকে, তবে আপনারা নিশ্চয় জানিবেন, তাহা খাঁটি সোনা নহে। যাহা খাঁটি নহে, তাহার মূল্য আপনারা কাহার কাছে প্রত্যাশা করেন? ইংরেজজাত যে এ সম্বন্ধে জহরী, তাহাকে ফাঁকি দিবেন কি করিয়া? আমাদের দেশহিতৈষণার উদ্যোগ তাহাদের কাছে শ্রদ্ধালাভ করিবে কি উপায়ে? আমরা নিজে দান করিলে তবেই দাবী করিতে পারি। কিন্তু সত্য কবিয়া বলুন, কে আমরা কি করিয়াছি? দেশের দারুণ দুর্যোগের দিনে আমাদের মধ্যে যাহাদের সুখের সম্বল আছে, তাহারা সুখেই আছি; যাহাদের অবকাশ আছে, তাহাদের আরামের লেশমাত্র ব্যাঘাত হয় নাই; ত্যাগ যেটুকু করিয়াছি, তাই উল্লেখযোগ্যই নহে; কষ্ট যেটুকু সহিয়াছি, আর্ত্তনাদ তাহা অপেক্ষা অনেক বেশিমাত্রায় করা হইয়াছে।

 ইহার কারণ কি? ইহার কারণ এই যে, এতকাল পরের দ্বারে আমরা মাথা কুটিয়া মরিবার চর্চ্চা করিয়া আসিয়াছি, স্বদেশসেবাব চর্চ্চা করি নাই। দেশের দুঃখ দূর—হয় বিধাতা, নয় গবর্মেণ্ট,করিবেন,এই ধারণাকেই আমরা সর্ব্ব-উপায়ে প্রশ্রয় দিয়াছি। আমরা যে দলবদ্ধ,—প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া নিজে এই কার্য্যে ব্রতী হইতে পারি, একথা আমরা অকপটভাবে নিজের কাছেও স্বীকার করি নাই। ইহাতে দেশের লোকের সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের সম্বন্ধ থাকে না, দেশের দুঃখেব সঙ্গে আমাদের চেষ্টার যোগ থাকে না, দেশানুরাগ বাস্তবতার ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় না—সেইজন্যই চাঁদার খাতা মিথ্যা ঘুরিয়া মরে এবং কাজের দিনে কাহারো সাড়া পাওয়া যায় না।

 আজ ঠিক্ কুড়িবৎসর হইল, প্রেসিডেন্সি কলেজের তদানীন্তন অধ্যাপক