পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
সমূহ।

ঘরের পাশে কি আছে জানিতে হইলেও হাণ্টার বই গতি নাই। তার পরে দেশের কৃষিসম্বন্ধে বল, বাণিজ্যসম্বন্ধে বল, ভূতত্ত্ব বল, নৃতত্ত্ব বল, নিজের চেষ্টার দ্বারা আমরা কিছুই সংগ্রহ করিতে চাই না। স্বদেশের প্রতি এমন একান্ত ঔৎসুক্যহীনতাসত্ত্বেও আমাদের দেশের প্রতি কর্ত্তব্যপালন-সম্বন্ধে বিদেশীকে আমরা উচ্চতম কর্ত্তব্যনীতির উপদেশ দিতে কুণ্ঠিত হই না। সে উপদেশ কোনোদিনই কোনো কাজে লাগিতে পারে না। কারণ, যে ব্যক্তি কাজ করিতেছে, তাহার দায়িত্ব আছে, যে ব্যক্তি কাজ করিতেছে না, কথা বলিতেছে, তাহার দায়িত্ব নাই,—এই উভয় পক্ষের মধ্যে কখনই যথার্থ আদান-প্রদান চলিতে পারে না। এক পক্ষে টাকা আছে, অন্যপক্ষে শুদ্ধমাত্র চেক্‌বইখানি আছে, এমন স্থলে সে ফাঁকা চেক্ ভাঙানো চলে না। ভিক্ষারস্বরূপে এক-আধবার দৈবাৎ চলে, কিন্তু দাবিস্বরূপে বরাবর চলে না—ইহাতে পেটের জ্বালায় মধ্যে মধ্যে রাগ হয় বটে, একএকবার মনে হয় আমাকে অপমান করিয়া ফিরাইয়া দিল—কিন্তু সে অপমান, সে ব্যর্থতা তারস্বরেই হৌক, আর নিঃশব্দেই হৌক, গলাধঃকরণপূর্ব্বক সম্পূর্ণ পরিপাক করা ছাড়া আর গতি নাই। এরূপ প্রতিদিনই দেখা যাইতেছে। আমরা বিরাটসভাও করি, খবরের কাগজেও লিখি, আবার যাহা হজম করা বড় কঠিন, তাহা নিঃশেষে পরিপাকও করিয়া থাকি। পূর্ব্বের দিনে যাহা একেবারে অসহ্য বলিয়া ঘোষণা করিয়া বেড়াই, পরের দিনে তাহার জন্য বৈদ্য ডাকিতে হয় না।

 আশা করি, আমাকে সকলে বলিবেন, তুমি অত্যন্ত পুরাতন কথা বলিতেছ, নিজের কাজ নিজেকে করিতে হইবে, নিজের লজ্জা নিজেকে মোচন করিতে হইবে, নিজের সম্পদ নিজেকে অর্জ্জন করিতে হইবে, নিজের সম্মান নিজেকে উদ্ধার করিতে হইবে, এ কথার নুতনত্ব কোথায়! পুরাতন কথা বলিতেছি,—এমন অপবাদ আমি মাথায় করিয়া লইব, আমি নূতন-উদ্ভাবন-বর্জ্জিত,—এ কলঙ্ক অঙ্গের ভূষণ করিব। কিন্তু যদি