পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
সমূহ।

 সেই জন্যই দেখিতে পাই গবর্মেণ্টের দানের সঙ্গে যেখানেই আমাদের শক্তির কোনো সহযোগিতা নাই সেখানে সেই দানই বক্র হইয়া উঠিয়া আমাদের কত না বিপদ ঘটাইতে পারে! প্রশ্রয়প্রাপ্ত পুলিস্ যথন দস্যুবৃত্তি করে তখন প্রতিকার অসম্ভব হইয়া উঠে; গবর্মেণ্টের প্রসাদভোগী পঞ্চায়েৎ যখন গুপ্তচরের কাজ আরম্ভ করে তখন গ্রামের পক্ষে তাহা যে কতবড় উপদ্রবের কারণ হইতে পারে তাহা কিছুই বলা যায় না; গবর্মেণ্টের চাকরি, যখন শ্রেণীবিশেষকেই অনুগ্রহভাজন করিয়া তোলে তখন ঘরের লোকের মধ্যেই বিদ্বেষ জুলিয়া উঠে এবং রাজমন্ত্রীসভায় যখন সম্প্রদায়বিশেষের জন্যই আসন প্রশস্ত হইতে থাকে তখন বলিতে হয় আমার উপকারে কাজ নাই তোমার অনুগ্রহ ফিরাইয়া লও। আমাদের নিজের মধ্যে সতেজ শক্তি থাকিলে এই সমস্ত বিকৃতি কিছুতেই ঘটিতে পারিত না—আমরা দান গ্রহণ করিবার ও তাহাকে রক্ষা করিবার অধিকারী হইতাম—দান আমাদের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই বলিদান হইয়া উঠিত না।

 অতএব আমি যাহা বলিতেছি তাহাতে এ বোঝায় না যে আমাদের কর্ম্মের কোনো উপকরণ আমরা গবর্মেণ্টের নিকট হইতে লইব না, কিন্তু ইহাই বুঝায় যে নিজের সম্পূর্ণ সাধ্যমত যদি কর্ম্মে প্রবৃত্ত হই তবেই তাহার উপকরণ আমরা সকল স্থান হইতেই অসঙ্কোচে সংগ্রহ করিবার অধিকারী হইব। নতুবা আমাদের সেই গল্পেব দশা ঘটিবে। আমরা মা কালীর কাছে মহিষ মানৎ করিবার বেলা চিন্তা করিব না বটে কিন্তু পরে তিনি যখন অনেক ক্ষমা করিয়াও একটিমাত্র পতঙ্গ দাবী করিবেন তখন বলিব, মা, ওটা তুমি নিজে ক্ষেত্রে গিয়া ধরিয়া লওগে। আমরাও কথার বেলায় বড় বড় করিয়াই বলিব কিন্তু অবশেষে দেশের একটি সামান্য হিতসাধনের বেলাতেও অন্যের উপরে বরাৎ দিয়া দায় সারিবার ইচ্ছা করিব।