পাতা:সরল বেদান্ত দর্শন.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ সরল বেদন্তি দর্শন । প্রচলিত আছে। এস্থলে “আমি” শব্দ দ্বারা “আমি”শব্দের আম্পদ চিন্ময় আত্মাকে না বুঝাইয়া অনাত্মা শরীরকে বুঝাইতেছে। একটু প্রণিধান করিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে যে,এইরূপ বোধ ভ্ৰমমাত্ৰ—“তুমি” শব্দ দ্বারা শরীর বুঝাইতে পারে না। আমার হস্ত বা পদদ্বয় সমগ্র শরীর হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিলে সেই ছিন্ন হস্ত পদ আর “আমি” শব্দ বাচ্য থাকে না । আমাদের এই শরীর নিয়ত পরিবর্তনশীল। শৈশবাবস্থায় যে চৰ্ম্ম, রক্ত, মাংস, এবং অস্থিতে আমার শরীর গঠিত ছিল, ক্রমাগত পরিবর্তনে কৈশোরে আর ঠিক সেই চৰ্ম্ম, রক্ত, মাংস ও অস্থি, আমার শরীরে নাই ; এবং কৈশোর অবস্থার শরীরের রক্তমাংসাদি বৃদ্ধাবস্থায় শরীরে থাকিবে না। কিন্তু শৈশব কালেও যে “আমি”কৈশোরে ও সেই “আমি”,এবং বৃদ্ধাবস্থায়ও সেই “আমি” । আমার নিয়ত পরিবর্তনশীল শরীর কখন “আমি”— শব্দবাচা, পরিবর্তনরচিত, নিত্য, চিন্ময় আত্মা হইতে পারে না। অতএব আমি কৃশ, আমি গেীর, আমি যাইতেছি, এই সমস্ত বাক্যে অহং জ্ঞানজ্ঞেয় আত্মাতে (অামাতে) দেহরূপ অনাত্মার তাদাত্ম্যভ্রম হইয়া থাকে। উক্ত প্রকার অনুধাবন করিয়া দেখিলে সহজেই প্রতীয়মান হইবে যে, আমার ইঞ্জিয়শক্তি, আমার মন, এবং আমার বুদ্ধি, “আমি”—রূপ-আত্মা হইতে পৃথক, স্বপ্নকালে, অথবা উন্মত্ত অবস্থায়,অথবা কামক্রোধাদি রিপুর বশীভূত হইলে, আমার ইঞ্জিয়শক্তি, আমার মন, এবং আমার বুদ্ধি বিকৃত হয়, কিন্তু “আমি” রূপ আত্মার কখন বিকৃতি হয় না। স্বপ্নহীন নিদ্রাকালে (স্কযুপ্তি সময়) ইঞ্জিয়শক্তি, মন, এবং বুদ্ধি অতি স্থম্মাবস্থায় থাকে ; এমন কি তাহাদের অস্তিত্বমাত্র অনুভূত হয় না। কিন্তু ঐ স্বযুপ্তির পর আমি যে সুপ্ত হইয়াছিলাম এটা অনুভব করিতে পারা যায়। সুতরাং পরিবর্তনরহিত এই “আমি” জ্ঞানটা পরিবর্তনশীল ইন্দ্ৰিয়শক্তি, মন, এবং বুদ্ধি হইতে পৃথক । আমি অন্ধ ইহার অর্থ আমার দর্শনশক্তি নাই। আমি দুঃখী, আমি সুখী এই প্রকার বাক্যের প্রকৃত অর্থ আমার মন মুখী, আমার মন দুঃখী। আমি জ্ঞানী, ইহার প্রকৃত অর্থ আমার বুদ্ধি জ্ঞান দ্বারা মার্জিত। আমি অজ্ঞান ইহার অর্থ আমার বুদ্ধি জ্ঞান দ্বারা মার্জিত নয়।