পাতা:সরল বেদান্ত দর্শন.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

은 | NG) এইরূপে পরীক্ষা করিয়া দেখিলেই বুঝা যায় যে ভ্রমবশতঃই“আমি” শব্দ দ্বারা চিন্ময় আত্মাকে না বুঝিয়া অনাত্মা শরীর, ইঞ্জিয়, মন, বা বুদ্ধিকে বুঝা যায়। লৌকিক ব্যবহারে এই আত্মা এবং অনাত্মার ভ্রম সচরাচর হইয়া থাকে। এই প্রকার ভ্রমকে “অধ্যাস” অথবা “আরোপ” বলা যায়। এই অধ্যাসকে পণ্ডিতেরা “অবিদ্যা” কহিয়া থাকেন। মরুভূমিতে মরীচিকাকে জলাশয় বলিয়া ভ্রম হয় ৷ যতক্ষণ যথার্থ জ্ঞান না হয় ততক্ষণ এই ভ্রম থাকে। এই ভ্ৰমে পতিত হইয়া অনেকে অনেকরপ কষ্ট পাইয়া থাকে। কিন্তু ভ্রম অপসারিত হইলে বালুকারাশিকে বালুকারাশি বলিয়াই বোধ হয়। তখন আর ঐ ভ্ৰমজনিত কষ্ট পাইতে হয় না। অবিদ্যা ঘুচিয়া বিদ্যালাভ হইলেই অবিদ্যাজনিত কষ্ট হইতে মুক্তি পাওয়া যাইতে পারে। অবিদ্যা প্রভাবে “আমি” শব্দদ্বারা কখন শরীর বুঝায়, কখন ইঞ্জিয়শক্তি বুঝায়, কখন মন বুঝায়, কখন বুদ্ধি বুঝায়, অর্থাৎ “আমি” শব্দের উপর শরীর, ইন্দ্রিয়ুশক্তি, মন এবং বুদ্ধির “আরোপ” বা “অধ্যাস” হয়। কিন্তু অবিদ্যা নষ্ট হইয়া বিদ্য উৎপন্ন হইলেই “আমি” শব্দ দ্বারা চিন্ময় আত্মামা এই উপলব্ধ হয় । এক পদার্থে অল্প পদার্থের আরোপই “অধ্যাস” । অন্ধকার ঘরে পতিত একগাছি রজুতে সর্পভ্রম হইল এবং সর্পজনিত ভীতিও মনে উদিত হইয়া হৃৎকম্পের ও অন্যান্ত উপদ্রবের কারণ হইয়া উঠিল। কিন্তু সেই অবিদ্যা নষ্ট হইয়া যথার্থ জ্ঞানের উদয় হওয়ায় যখন জানিতে পারিলাম যে উহা সর্প নহে, রজুমাত্র, তখন আমি হৃৎকম্পাদি উপদ্রব হইতে মুক্ত হইলাম। ইহার কারণ এই যে, রজুতে সৰ্পের অধ্যাস হইয়াছিল সত্য, কিন্তু বাস্তবিক সপের দোষ গুণ রজুতে সংক্রামিত হয় নাই। এতদ দ্বারা বুঝা যাইবে যে যাহাতে যাহার অধ্যাস, তাহাতে তাহার দোষ গুণ অল্পমাত্রও পৃষ্ট হয় না। রজুতে সৰ্পের অধ্যাস হয় অথচ তাহাতে সৰ্পের সম্বন্ধ থাকে না, সৰ্পের দোষ গুণ পৃষ্ট হয় না। সর্পেও রজ্জ্বর দোষ গুণ অনুক্রমিত হয় না। এইরূপ আত্মাতে অনাত্মার এবং অনাত্মাতে আত্মার অধ্যাস হইলেও আত্মা এবং জনাত্মা পরস্পরের দোষ গুণ দ্বারা লিপ্ত হইতে পারে লা ।