পাতা:সরল বেদান্ত দর্শন.djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* 6 e সরল বেদান্ত দশন । ব্যক্তি বা পদার্থই নাই। স্বতরাং ব্রহ্মের ধ্যান বা উপাসনার কোন প্রয়োজন নাই । অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, পরোপকার, দয়া, ইন্দ্রির-সংযম প্রভৃতি শাস্ত্রের বিধান সকল মানিয়া চলিলেই বেদান্তশাস্ত্রের উপদেশ প্রতিপালন করা হয় । আবার কেহ কেহ বলেন যে যদিও বাস্তবিক ব্ৰহ্ম বলিয়। কোন পদার্থ নাই তথাপি বেদান্ত শাস্ত্র একটী নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত, পুরুষের কল্পনা করিয়া উপদেশ দিয়াছেন যে,তোমরা এই আদর্শধ্যেয় পুরুষের ধ্যান করিতে থাক, এই পরম উৎকৃষ্ট পুরুষকে ধ্যান করিতে করিতে তোমাদের সর্বপাপ বিনষ্ট হইবে এবং তোমরা মিৰ্ব্বাণ পাইবে । আবার ঐ শ্রেণীস্থ অপর কেহ কেহ বলেন যে ঐ বাক্যগুণি একেবারে নিরর্থক ও অপ্রমাণ নহে এবং ব্ৰহ্ম নাই এ কথাও সত্য নহে। তবে ব্রহ্ম জগতের কারণ, জগৎ মায়াময়, চিন্ময় ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, প্রভৃতি তথ্য সকলের উপদেশ দেওয়া বেদান্তশাস্ত্রের চরম উদ্দেশ্য নহে। যেমন যজ্ঞক্রিয়ার উপদেশ দেওয়া শাস্ত্রের উদেশ্য হইলেও ষজ্ঞসম্পাদনের জন্য পশুবন্ধন বিহিত, এবং পশুবন্ধনের জন্ত যুপকাষ্ঠের প্রয়োজন হওয়ার পশু এবং যুপকাঠের উপদেশ শাস্ত্রে দেওয়া হয়, সেইরূপ শাস্ত্রোক্ত মোক্ষপদ পাইবার জন্ত নিগুণ হ্রহ্মের উপাসনা ক্রিয়ার বিধানই শাস্ত্রের চরম উদেশ্য, এবং তজ্জন্তই ব্ৰহ্ম কি পদার্থ ইত্যাদি উপদেশ শাস্ত্রে দেওয়া হইয়াছে। কেবলমাত্র স্বরূপ ভাবে ব্রহ্মকে জান ইহা শাস্ত্রের বিধান নহে। পরন্তু ব্ৰহ্মকে মোটামুটী বা পরোক্ষ বা তটস্থ ভাবে জানিয়া ব্রহ্মের উপাসনা কর ইহাই শাস্ত্রেয় বিধান। সুতরাং প্রথমে ব্রহ্মের উপাসনা কর, তৎপরে ব্রহ্মকে জান, এবং ব্রহ্মজ্ঞান হইলেই জীব মুক্ত হন, অর্থাৎ ব্ৰহ্মজ্ঞান ও মোক্ষ একই কথা, এইরূপ উপদেশ দেওয়া শাস্ত্রের উদ্দেশ্য নহে। ব্ৰহ্ম উপাসনা কর, ইহাই বিধি, এবং বাস্তবিক ইহাই শাস্ত্রের উদ্দেশ্য। “প্রথমে ব্রহ্মকে তটস্থ বা পরোক্ষ বা মোটামুটী ভাবে জান, তৎপরে ব্রহ্মের উপাসনা করিতে থাক, এবং উপাসনার ফলে অবশেষে মোক্ষপদ পাইবে এই কথাই সত্য,”—এই উক্তি সমর্থনের জন্ত শেষোক্ত শ্রেণীর শাস্ত্রব্যবসায়ীরা নিম্নলিপিত হেতু প্রদর্শন করান।