পাতা:সরল বেদান্ত দর্শন.djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম প্রবন্ধ । ੧ੇ। শাস্ত্র অনেক সময় স্বপ্নের দৃষ্টান্ত দিয়াছেন। নিদ্রাকালে ইঞ্জিয়পথে কোন বস্তুর বাস্তবিক অস্তিত্ব না থাকিলেও, স্বপ্নবশতঃ যেমন বোধ হয় স্বপ্নদৃষ্ট পদার্থ সকল বাস্তবিক বিদ্যমান রহিয়াছে, সেইরূপ এক সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম ভিন্ন বাস্তবিক অন্ত কোন বস্তুর পারমার্থিক অস্তিত্ব না থাকিলেও অবিদ্যা বশতঃ জাগরণকালে বোধ হয় যে এই ব্যবহারিক জগৎ বাস্তবিক সম্মুখে বিদ্যমান রহিয়াছে। যতক্ষণ স্বপ্ন দেখা যায় ততক্ষণ স্বপ্নদৃষ্ট মনুষ্য পশু প্রভৃতি নানাপ্রকার জীব ও অন্তান্ত পদার্থ স্বপ্নদ্রষ্টার সম্মুখে সত্যভাবে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্ট ভিন্ন অন্ত কোন ব্যক্তিই সেই স্বপ্নদৃষ্ট জীব ও অন্তান্ত পদার্থগুলিকে দেখিতে পায় না এবং নিদ্রা ভাঙ্গিয়া গেলে স্বপ্নদ্রষ্টাও সেইগুলিকে অসত্য বলিয়া দেখিতে পায়। সুতরাং স্বপ্নদৃষ্ট পদার্থগুলি পুরুষতন্ত্র। স্বপ্নদ্রষ্টার মানসিক কল্পনা ভিন্ন সেগুলির বাস্তবিক অস্তিত্ব নাই। স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেলে যে সকল পদার্থ দেখা যায় তাহাদের অস্তিত্ব এই ব্যবহারিক জগতের সকলেই দেখিতে পায়। সুতরাং এই ব্যবহারিক দৃষ্টিতে এই বাহা জগৎ ব্যক্তিবিশেষের মনের নিরপেক্ষ অতএব বস্তুতন্ত্র। মরুভূমিতে জলভ্ৰম, স্থাণুতে পুরুষ ভ্রম, রজুতে সর্পভ্রম প্রভৃতি ব্যবহারিক জগতের ভ্রম সকল পরীক্ষা করিলেই স্পষ্ট বুঝা যায় যে, “ভ্রম মাত্রেই পুরুষতন্ত্র”। বাস্তবিক মরুভূমিতে জল নাই—দ্রষ্টার মনেই তাহ হইয়াছে। সুতরাং ভ্রমটা পুরুষতন্ত্র বৈ আর কি হইতে পারে ? আবার মরুভূমিতে মরুভূমি জ্ঞান, স্থাণুতে স্থাণুজ্ঞান, রজ্জতে রজ্জ্ব জ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞানসকল পুরুষবিশেষের মনের উপর নির্ভর করে না। সুতরাং ব্যবহারিক দৃষ্টিতে সেই জ্ঞান সকল বস্তুতন্ত্র। শাস্ত্রোপদিষ্ট মার্গ অবলম্বন পূৰ্ব্বক স্বশ্নরূপে বিচার ও তপস্যা করিলে এই ব্যবহারিক বস্তুতন্ত্র জ্ঞান সকলও পারমার্থিক দৃষ্টিতে পুরুষতন্ত্রমাত্র বলিয়া দৃষ্ট হয়। অবিদ্যাবশতঃই ব্যবহারিক জগৎ অবিদ্যােচ্ছন্ন লোকের দৃষ্টিতে সত্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়। পারমার্থিক দৃষ্টিতে জগৎ মায়াময় অতএব ভ্রমমাত্র, সুতরাং পুরুষতন্ত্র, এবং ব্ৰহ্মই একমাত্র সত্য। সুতরাং অদ্বৈত ব্ৰহ্মজ্ঞানই একমাত্র ৰস্তুতন্ত্র ।