পাতা:সরল বেদান্ত দর্শন.djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ প্রবন্ধ । বস্থায় যেরূপ লোপ পায়, সেইরূপ যখন ব্রহ্মবিদের জ্ঞান দৃষ্টিতে সমস্ত বাহ ও অন্তর্জগৎ কেবল এক অদ্বৈত আত্মায় বিলয় প্রাপ্ত হয় তখন তিনি কোন ইন্দ্রিয় দ্বারা কোন বিষয় দর্শন, আঘ্রাণ, শ্রবণ ও মনন করিবেন, কোন ব্যক্তিকে অভিবাদন করিবেন, এবং কোন বিষয় জানিবেন ? ব্রহ্মবিদের অবিদ্যা নাশ হওয়ায় তিনি কৰ্ত্তা, করণ, কৰ্ম্ম, ও ক্রিয়া ও সমস্ত জগৎকে মায়াময় দেখেন, তাহার দৃষ্টিতে একমাত্র সৎচিৎ-আনন্দ আত্মা ভিন্ন আর কোন বস্তু সত্য বলিয়া প্রতিভাত হয় না । যেমন ভ্রম কালে ভ্রান্ত ব্যক্তি মরুভূমিকে জল মনে করে এবং ভ্রম ঘুচিয়া গেলে মরুভূমিকে মরুভূমিই দেখে সেইরূপ অবিদ্যাকালে ভ্রান্ত জীব আত্মাকে জগৎ দেখে, অবিদ্যা ঘুচিয়া গেলে আত্মাকে আত্মাই দেখে। ঈশোপনিষদ বলিয়াছেন— পরমার্থবস্তুদশা যখন সমস্ত জগৎকে একমাত্র আত্মারূপে দেখেন তখন র্তাহার অদ্বৈতজ্ঞানে মোহ এবং শোকের কোন কারণ থাকিতে পারে না । ভগবান বাসুদেব গীতায় বলিয়াছেন— যে ব্যক্তি আত্মাতেই রতি, তৃপ্তি ও তুষ্টি উপভোগ করেন সেই আত্মজ্ঞাননিষ্ঠ ব্যক্তির কর্তব্য কৰ্ম্ম কিছুই নাই । তিনি বিধি নিষেধের অতীত। কৰ্ম্ম-অকৰ্ম্ম-পুণ্য-পাপ প্রভৃতি সমস্তই তাহার দৃষ্টিতে মায়াময়। সুতরাং পুণ্যার্থে তাহার কৰ্ম্ম করিবার প্রয়োজন নাই এবং কৰ্ম্ম না করার জন্ত র্তাহার কোন প্রত্যবায় হয় না। আব্ৰহ্ম অর্থাৎ হিরণ্যগৰ্ভ ব্ৰহ্ম৷ হইতে স্তম্ব অর্থাৎ তৃণ পর্যন্ত সমস্ত ভূতই তাহার দৃষ্টিতে ইন্দ্রজাল সদৃশ মায়াময় হওয়ায় তাহারা তাহার কোন প্রয়োজনেই লাগে না । কঠোপনিষদ, ৰলিয়াছেন— যাহাকে জগৎ বলিয়া মনে হয় তাহাই আত্মা ; সেই নিরাকার নিৰ্ব্বিকার আত্মাই মায়া-প্রভাবে দ্রষ্টা ও দৃশ্যভাবে ভাসমান রহিয়াছেন। যে ব্যক্তি এই জগৎ ও আত্মাকে পৃথক মনে করে তাহাকে বারম্বার জন্ম ও মৃত্যু পরিগ্রহ করিতে হয়।