পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

রাজগণের আদর্শে সে যুগের ধর্মের হিংস্র দেবতার পূজা লোভে মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার করতে আরম্ভ করলেন, সমাজে যে নিরীহ নিপীড়ন চলছিল, সাহিত্যেও তার ছাপ পড়ল। শীতলা, মনসা, ঘেঁটু থেকে আরম্ভ করে বন-বিবি, সত্যপীর, গাজী প্রভৃতি অমঙ্গলের দেবতা,—বাঘের দেবতা দক্ষিণরায়, কুমীরের দেবতা কালুরায়,—ক্ষেত্রপাল পঞ্চানন্দ, হাজরা প্রভৃতি তথাকথিত প্রেতযোনি,—সে সময়ে ছলে বলে, কৌশলে অসহায় অশিক্ষিত লোকের কাছে পূজা আদায় কর’তে লাগলেন। দেব দেবীদের ভক্তেরা ব্যভিচার বিশ্বাসঘাতকতা প্রভৃতি করেও নিষ্কৃতি পেল, আর যাঁরা তাঁদের পূজা দিতে সম্মত হলেন না, তাঁরা ভালো লোক হলেও তাদের দুর্দ্দশার সীমা রইল না। এই তিমিরাচ্ছন্ন যুগেই আবার নানক, চৈতন্য, কবীর, দাদু, সুরদাস প্রভৃতি মহাপুরুষেরও জন্ম হয়, তাঁদের সৃষ্ট ধর্মপ্লাবনে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত ভেসে যায়। এই যুগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে সব নারী সাহিত্য-চর্চা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন উচ্চস্তরের সাধিকা, তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে ভক্তি-তত্ত্বই প্রধান। এই সব নারী সাহিত্যিকা বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় তাঁদের দান রেখে গেছেন, তার সবগুলির সঙ্গে পরিচয় আমাদের নেই। কিন্তু অনবদ্যরসসৃজন-বৈশিষ্ট্যে যাঁর রচনা প্রাদেশিক গণ্ডী এমন কি ভারতের গণ্ডী ছাড়িয়ে বিশ্বের ভক্তি-সাহিত্যের অমরাবতীতে স্থান পাবার যোগ্য ব’লে বিবেচিত হয়েছে তাঁর নাম জানে না এমন সাক্ষর ও নিরক্ষর নরনারী বাংলাদেশে অল্পই আছেন। আমরা