পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

॥৶৹

“গাঁথবনা আর আমার মালা, বাঁধবনা না আর প্রেমের গান,
ভরবনা না আর ফুলের ডালা, রাখবনা মান অভিমান।’’

যেখানে শুনি;—

‘‘সোনার নূপুর রতন কেয়ুর এ সব তোরা নে’রে নে’
ফুলের মালা তাবিজ বালা আধেক গাথা সেরে নে।’’

তখনি মনে পড়ল এই জিনিষটিই সেই সুশান্ত মুখে ফোটবার এই প্রতীক্ষিত হয়েছিল। তাঁর মুখের যে ভাবটি আমায় সত্য করে আকৃষ্ট করেছিল, সে শুধু তাঁর বাইরের রূপই নয়, সে বস্তুটি তাঁর এই নিস্পৃহভাবটুকু। তাঁরই কথায় বলি;—

“ত্যাগের মাঝে যে সুর বাজে, মধুর সে যে সুমধুর,
ভোগের ক্ষণে সেই মধুরী, তিক্ত বিরস বিহীন সুর।’’
“অবহেলায় আপন জনে যতই আমায় ছাড়ে,
ততই আমার তোমার দিকে আরো যে টান বাড়ে,’’
—এবং—“বিলাব আমারে বিলাব,
সুরভি অধীর অনিলের সম, দিক্‌দিগন্তে মিলাব।”

অথবা—

“রেখো নিপীড়ন নির্য্যাতনেও অটুট ধৈর্য্য তপস্বিনী,
হে ললনা! তব ললিত বিলাসে
ত্যজি হও দৃঢ় ওজস্বিনী।”

 এর আর একটু উপরের ভাবে তিনি বলেছেন:—

‘‘আমার যা’ কিছু রাখিনাই বাকি! ফুরায়ে দিয়েছি দানে,
বিলায়ে দিয়েছি ছড়ায়ে দিয়েছি হারায়েছি প্রাণে প্রাণে।”

ধাপে ধাপে সুরগ্রাম ক্রমশঃই চড়ে উঠ্‌ছিল। ত্যাগমন্ত্র দীক্ষিতা “শ্রমনীর”—অজস্র ভোগের মধ্যবর্ত্তিনী—উদাসিনীর মধ্যে একদা যেটা অস্পষ্ট ছায়াচ্ছন্ন ছিল, তারই ক্রমশঃ পরিস্ফুরণ হয়ে চলেছে। কার জীবন কিসের জন্য সৃষ্ট, কিসের মধ্যে দিয়ে কে’ জীবনের কোন পরিণতি