পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

“বর্‌ মজারে মা গরীবাঁ না চিরাঘে না গুলে,
না পরে পর্‌ওয়ানা সুজদ্‌ না সদায়ে বুল্‌বুলে।
‘দীন আমি, পতঙ্গের পক্ষ দহিবারে,
জ্বেলো না প্রদীপ মম সমাধি-আগারে।
আকর্ষিতে বুল্‌বুল্‌‌ আকুল সঙ্গীত
কোরো না কুসুমদামে ইহারে ভূষিত॥’

 এক জীবনে পতন-অভ্যুদয়ের সঙ্গে এরূপ নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তাঁর মতো পৃথিবীর ইতিহাসে অল্প নারীরই হয়েছিল। তিনি একদিন মরুভূমির মধ্যে সদ্যোজাত অবস্থায় পরিত্যক্ত হয়েছিলেন, আর একদিন দিল্লীর সিংহাসনে সম্রাজ্ঞীরূপে বসেছিলেন; শুধু তাই নয়, সম্রাটকে হাতের পুতুল ক’রে বিশাল ভারতবর্ষের ভাগ্য-বিধাত্রীরূপে সাম্রাজ্যের শাসনকার্য দীর্ঘকাল ধরে সগৌরবে চালিয়েছিলেন। সম্রাটের মৃত্যুর পর সপত্নীপুত্রের রাজত্বে অবহেলিত উপেক্ষিত অস্তিত্বের সায়াহ্নে রূপ, যৌবন, ক্ষমতা এবং ঐশ্বর্যের ক্ষণস্থায়িত্ব মর্মে মর্মে অনুভব ক’রে তিনি তাঁর বিদায় অনুরোধ ঐভাবে জানিয়ে গেছেন! নুরজাহান আরবী এবং ফারসী সাহিত্যে সুপণ্ডিতা এবং সুগন্ধি দ্রব্যসমূহের ও বহুবিধ বিচিত্র শিল্পকলার ও অলঙ্কারের আবিষ্কর্ত্রী ছিলেন। তাঁর প্রভাব তাঁর মৃত্যুর পরেও মোগল অন্তঃপুরকে দীর্ঘকাল স্ত্রীশিক্ষার অনুকূল ক’রে রেখেছিল।

 পরবর্তী সম্রাট সাহজাহানের বিশ্ব—বিখ্যাতা পত্নী মমতাজমহল শুধু আদর্শ পত্নীই ছিলেন না, পারস্য সাহিত্য-রসজ্ঞা রূপে এবং ফার্সীতে কবিতা রচনার জন্য তার খ্যাতি ছিল। তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা জহান্‌-আরা সিত্তী-উন্নিসা নাম্নী এক বিদুষী শিক্ষয়িত্রীর