পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
৯৯

থেকে সেদিন নিরক্ষর জনসাধারণকে উচ্চতম ধর্মতত্ত্ব ও নীতিশিক্ষা দিত এবং দেশের অতীতের সঙ্গে তাদের বিশিষ্টরূপে পরিচিত করত।

 পূর্বেই বলেছি, সংস্কৃত ভাষাকে একদিন ভারতীয়েরা শুধু দেবভাষা এবং ধর্মের ভাষা নয়, শিক্ষিতের ভাষা ব’লে জ্ঞান ক’রতেন। ভারতের সকল প্রান্তের এবং সকল প্রদেশের শিক্ষিত ব্যক্তি সেদিন সংস্কৃতে পরস্পরের সঙ্গে তর্ক আলোচনা করতেন, রাজসভায় এবং শিক্ষিত সমাজে সংস্কৃত না জানলে সম্মান লাভ দূরে থাক, কোনো কাজই হ’ত না। এর দ্বারা একদিকে যেমন সর্বভারতীয় শিক্ষিত হিন্দুর মধ্যে একটা ঐক্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তেমনি অপরদিকে যে সব দরিদ্র অশিক্ষিত অনার্য-প্রধান জনসাধারণ গ্রামের বাইরে যাবার প্রয়োজন অনুভব ক’রত না এবং ভারত বা পৃথিবীর চিন্তা নিয়ে মাথা ঘামাত না, যাদের মুখ দিয়ে সংস্কৃতের সুস্পষ্ট উচ্চারণ হওয়া শক্ত ছিল, তাদের জ্ঞান এবং ধর্মচর্চার পথে সংস্কৃত ব্যাকরণের দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর বাধাস্বরূপ ছিল। তাই দেখতে পাওয়া যায় বুদ্ধ, চৈতন্য প্রভৃতি যে সব মহাপুরুষ ধর্মকে আচণ্ডালের বোধগম্য ক’রতে চেয়েছিলেন এবং দেশের অজ্ঞতম ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তির এবং ধর্মপ্রাণতার বিকাশ সাধন করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা প্রাদেশিক প্রাকৃতে অর্থাৎ নিজ নিজ মাতৃভাষায় ধর্ম প্রচার করেছিলেন। একদিকে অতীত মহিমার এবং ঐক্যের স্মৃতি, আর একদিকে বর্তমানের প্রয়োজন, এই দুই বিরোধী শক্তির যখন সঙ্ঘর্ষ চলছে, অষ্টাদশ পুরাণ এবং রামায়ণ ভাষায় শুনলে মানুষকে নরকে যেতে হয় ব’লে ভয় দেখিয়ে যখন প্রবীণ দল