পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

নবীন দলকে দাবিয়ে রাখবার চেষ্টা করছেন, সেই সময়ে মুসলমান রাজশক্তি প্রাদেশিক ভাষার পক্ষ নিয়ে সমস্ত বিরোধের শেষ ক’রে দিল। তারপর দরবারে ও আদালতে ফারসী এবং শিক্ষিত অশিক্ষিত বাঙ্গালীর জীবনে বাংলার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত হ’ল। এর বহু পূর্বেই বাংলা ভাষায় সাহিত্য ও ধর্মচর্চা আরম্ভ হয়েছিল, চর্যাপদ প্রভৃতিতে তার আদি রূপ আমরা দেখতে পাই। বৈদিক যুগে বাংলাকে যারা ‘পক্ষীর দেশ’ ব’লে অবজ্ঞা দেখিয়েছিলেন, বাঙ্গালীর ভাষাকে পাখীর কিচির-মিচির শব্দের মতো দুর্বোধ্য ব’লে অবজ্ঞা করতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাঁদের বংশধররাই এদেশে এসে যখন বাস ক’রলেন, তখন দেশের ভাষাকে মাতৃভাষা ব’লে স্বীকার করলেও প্রথম প্রথম তাকে শ্রদ্ধা ক’রতে পারেন নি। বাংলা ভাষাকে ধর্মের ভাষারূপে ব্যবহার করবার প্রথম প্রেরণা এল, বৌদ্ধ, জৈন, নাথপন্থী এবং সহজিয়াদের কাছ থেকে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনরভ্যুদয়ে বাঙালী বৌদ্ধেরা এবং জৈনেরা অনেকে বৈষ্ণব সহজিয়া এবং তান্ত্রিকতার আড়ালে বৌদ্ধবাদকে লুকিয়ে হিন্দুধর্মে ফিরে এলেন, অনেকে নবাগত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ক’রে রাজার আশ্রয় পেলেন। প্রাচীনতম বাংলা চর্যাগুলির পর ময়নামতীর গান, শূন্য পুরাণ প্রভৃতির সময় নিয়ে মতভেদ চলছে। তার পরের যুগকে পাঁচালির যুগ বলে, এই যুগে কৃত্তিবাস, কাশীরামদাস প্রভৃতির লেখায় একদিকে পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিধারা অব্যাহত রাখবার চেষ্টা এবং অপরদিকে মঙ্গলকাব্যে অশিক্ষিত জনসাধারণের স্থানীয় লৌকিক দেবদেবীকে তাদের সমস্ত দেহমনের দৈন্য সমেত প্রাধান্য দেবার চেষ্টা আরম্ভ হয়েছে। এই যুগে বাংলায় যে সব